উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া জেলায় ঘটে গেল এক হত্যাকাণ্ড। বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় স্বামীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন নববধূ প্রগতি। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন তার প্রেমিক অনুরাগ যাদব এবং এক ভাড়াটে খুনি রামজি নাগর। পুলিশ ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেফতার করেছে এবং আরও অভিযুক্তদের খোঁজ চালাচ্ছে।
বিয়ের ১৫ দিনেই স্বামীর মৃত্যু: প্রেমিকের জন্য স্বামীকে সরানোর পরিকল্পনা
গত ৫ মার্চ, ২০২৫ তারিখে মৈনপুরীর ব্যবসায়ী দিলীপ (২৪) ও প্রগতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিয়ের পরেও প্রগতি তার প্রেমিক অনুরাগের প্রেমে মত্ত ছিলেন। চার বছরের সম্পর্কের টানেই সে স্বামীকে পথ থেকে সরানোর জন্য ভয়ঙ্কর চক্রান্ত করে। বিয়ের পর ‘মুহান দিখাই’ ও অন্যান্য রীতিনীতিতে উপহার হিসেবে পাওয়া টাকার কিছু অংশ দিয়ে সে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে। পুলিশ জানিয়েছে, ১৯ মার্চ দিলীপকে গুলি করা হয় এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঘটনার বিবরণ: খুনের জন্য ২ লক্ষ টাকার চুক্তি
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, প্রগতি এবং অনুরাগ মিলে দিলীপকে খুনের ছক কষেন। এই হত্যার জন্য তারা রামজি নাগর নামে এক শ্যুটারকে ২ লক্ষ টাকার চুক্তি দেন। প্রথমে প্রগতি তার প্রেমিক অনুরাগকে ১ লক্ষ টাকা দেয়। অনুরাগ সেই টাকা রামজি নাগরকে দেয়। ১৯ মার্চ, দিলীপ যখন কনৌজ থেকে ফিরছিলেন, তখন অভিযুক্তরা খালের কাছে একটি হোটেলের সামনে তাকে আটকায়। বাইকে করে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে দিলীপকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ময়দানে আহত অবস্থায় উদ্ধার, পরবর্তীতে মৃত্যু
১৯ মার্চ আউরাইয়ার সাহার থানার পালিয়া গ্রামের কাছে এক গমের ক্ষেতে গুরুতর আহত অবস্থায় দিলীপকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। গ্রামবাসীরা পুলিশকে খবর দিলে, পুলিশ দিলীপকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রথমে বিধুনার কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে, তাকে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র এবং পরে আগ্রার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২১ মার্চ রাতে দিলীপের মৃত্যু হয়।
সিসিটিভিতে ধরা পড়ল হত্যার ষড়যন্ত্র
পুলিশ তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করে। ফুটেজে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি দিলীপকে বাইকে করে নিয়ে যাচ্ছে। এরপরই সন্দেহের তীর যায় প্রগতি এবং অনুরাগের দিকে। পুলিশ যখন প্রগতি এবং অনুরাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তারা খুনের কথা স্বীকার করে ফেলে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে এবং অভিযুক্তদের কাছ থেকে ৩১৫ বোরের একটি পিস্তল ও তাজা কার্তুজ উদ্ধার করে।
প্রেমের জালে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: পুলিশ কী বলছে?
পুলিশ সুপার অভিজিৎ আর শঙ্কর জানিয়েছেন, প্রগতি এবং অনুরাগ দিলীপকে হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিল। ২২ বছর বয়সি প্রগতি, প্রেমিক অনুরাগ ওরফে মনোজ এবং খুনি রামজি নাগর—তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই ষড়যন্ত্রে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রেমের উন্মত্ততায় খুনের ষড়যন্ত্র
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নববধূর এমন নির্মম পরিকল্পনা ও নিষ্ঠুরতা হতবাক করেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, খুনের চক্রান্তে যুক্ত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।