হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের তেতো মিঠে সম্পর্ক গোটা বিশ্বের কাছে সুবিদিত। কিন্তু দু'দেশের মধ্যে একই রকম খাদ্যাভ্যাস, একই রকম সংস্কৃতি, একই রকম গান-বাজনা, সিনেমার প্রতি ভালোবাসা, বারবার সামনে এসেছে। ভারতীয় সিনেমা, পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হলেও তার পাইরেটেড ভার্সন সবার আগে পৌঁছে যায় ওয়াঘার ওপারে। পাকিস্তানের সঙ্গীতশিল্পীরা যেমন এ দেশে গেয়ে বিখ্যাত হন, তেমনই ভারতীয় অভিনেতা, সংগীতশিল্পীরা পাকিস্তানের সাধারণ বাসিন্দাদের কাছে সুপার হিরোর তকমা পান।
একসময় যখন এত আইকন ছিল না, সেই সময়ে দু'দেশের মধ্যে একটা সুতোর বন্ধন ছিল, একমাত্র লতা মঙ্গেশকর। হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের ভাগের পর শুধু এক দেশের দুটো টুকরো হয়নি। বরং সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে ভারতের একমাত্র পছন্দের গায়িকা, তারও দেশ ভাগ হয়ে যায়। লতা মঙ্গেশকর ভারতে থেকে যাওয়ায় পাকিস্তানিদের হাহুতাশ চরমে উঠেছিল। যদিও দূরে থেকেও পাকিস্তানি সঙ্গীতপ্রেমীরা নিজেদের কখনো লতা দিদির কাছ থেকে আলাদা করে দেখতে পারেননি। তাঁরা লাগাতার এটাই চেয়েছিলেন যে, তিনি কোনও ভাবে তাঁদের কাছে চলে যান। পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে নিন। তার বদলে তারা কাশ্মীর পর্যন্ত ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন।
যখন লতা মঙ্গেশকর জম্মু-কাশ্মীর ছাড়তে রাজি ছিলেন না পাকিস্তানিরা। বলা হয় কি অল ইন্ডিয়া রেডিও অফিসে একটি চিঠি এসেছিল। যার মধ্যে লতা মঙ্গেশকারকে নিয়ে বলা হয়েছিল, "হিন্দুস্থান কাশ্মীর রাখলে, লেকিন লতা মঙ্গেশকরকো পাকিস্তান কো দে দিয়া যায়।" অর্থাৎ কাশ্মীর ভারতীয়রা রেখে দিন। কিন্তু লতা মঙ্গেশকর কে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এর মধ্যে শুধুমাত্র সাধারণ সঙ্গীতপ্রেমীদের বক্তব্য নয়, প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের আবেদনও ছিল। এই চিঠিতে এই লিস্টের নাম ছিল মহান গায়িকা নুরজাহানের।
এক দফা নুরজাহান লতা মঙ্গেশকারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি আমার প্রশংসা করেন, কিন্তু লতা মঙ্গেশকর এক এবং অদ্বিতীয় তার মত আজ পর্যন্ত কেউ জন্মাননি। এ সমস্ত কথাবার্তায় পরিষ্কার যে লতা মঙ্গেশকরকে পাকিস্তানিরা কীভাবে কোন চোখে দেখতেন এবং কোন আসনে আসীন করেছিলেন হিন্দুস্তানে থেকেও তিনি পাকিস্তানি জনতার চোখের মণি হয়ে থেকেছেন সারা জীবন।
আমেরিকাতে রিসার্চের জন্য রাখা হবে গলা
সংগীতের দুনিয়ায় অনেক বড় বড় সংগীতকার, গায়িকারা জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু লতা মঙ্গেশকর তাদের সবার চেয়ে আলাদা এবং বিশেষ। তাঁকে শুনে এমন মনে হতো যে তার কণ্ঠে হতে স্বয়ং মা সরস্বতী বিরাজমান রয়েছেন। লতা দিদির আওয়াজ একটা শান্তি, পরম প্রশান্তির জায়গায় পৌঁছে দিত শ্রোতাদের। যা শুনে অনেক পারিবারিক কলহ থেমে গিয়েছে। তার আওয়াজ এর চর্চা শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছিল। এ কারণে তাঁর সুরেলা আওয়াজ সব সময় বৈজ্ঞানিকদের জন্য রিসার্চের বিষয় ছিল। বলা হয়েছে বিদেশীরা তাঁকে তার ভোকাল কর্ডের রিসার্চ করতে চান। এই কারণে তার গলা আমেরিকাতে রিসার্চের জন্য রাখা হতে পারে। লতা মঙ্গেশকর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এই জায়গায় ছিলেন, যেখানে যাঁর খামতি কখনও পূরণ হওয়ার নয়। লতা মঙ্গেশকর আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু মনে করা হচ্ছে যে তার সদাবাহার গান দু'দেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের কানে আজীবন ধ্বনিত হতে থাকবে। পাকিস্তানের লতা দিদিকে পাওয়া না হলেও তাঁর গান পেতে কোন অসুবিধা হয়নি।