অষ্টাদশ লোকসভার শুরু থেকেই শাসক-বিরোধী সংঘাত। স্পিকার পদ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার রাস্তায় গিয়েছিল বিরোধীরা। বুধবার ধ্বনি ভোটে জেতেন এনডিএ প্রার্থী ওম বিড়লা। তারপরই তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী-সহ বিরোধী নেতারা। কিন্তু সেই সঙ্গে বিরোধীরা সাংসদ বহিষ্কার-কাণ্ড নিয়ে ওম বিড়লাকে খোঁচাও দিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সংসদের আবহ বদলে গেল। যা দেখে হতবাক বিরোধীরা। ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন ওম বিড়লা। অধিবেশনে দুই মিনিট নীরবতাও পালন করা হল। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা বললেন,'১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করছে এই সংসদ। আমরা তাঁদের স্মরণ করছি যাঁরা জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং ভারতের গণতন্ত্র রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন'।
ওম বিড়লা এ দিন বলেন,'১৯৭৫ সালে ২৫ জুন ভারতের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়। ওই দিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। বাবা সাহেব আম্বেদকর প্রণীত সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছিলেন। সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের মা হিসেবে পরিচিত ভারত। ভারতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং তর্ক-বিতর্কের পরিসর রয়েছে'। তিনি আরও বলেন,'গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় এ দেশ সচেষ্ট থেকেছে। ইন্দিরা গান্ধী ভারতে একনায়কতন্ত্র চাপিয়ে দিয়েছিলেন। ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে চূর্ণ করা হয়েছিল। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কণ্ঠরোধ করা হয়'।
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা মনে করিয়ে দিযয়েছেন,জরুরি অবস্থার সময় ভারতের নাগরিকদের অধিকার ধ্বংস করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ে বিরোধী দলের নেতাদের কারাগারে পোরা হয়েছিল। পুরো দেশ পরিণত হয়েছিল জেলখানায়। তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার গণমাধ্যমের উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার সেই সময়টা ছিল আমাদের দেশের ইতিহাসে অন্যায়ের এক অন্ধকার পর্যায়। জরুরি অবস্থা জারির পর কংগ্রেস সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যা আমাদের সংবিধানের চেতনাকে চূর্ণ করেছিল'।
কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করে ওম বিড়লা জানান,'গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিকে আক্রমণ করেছিল কংগ্রেস। জরুরি অবস্থার সময় জোর করে বন্ধ্যাত্বকরণ করেছিল কংগ্রেস। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁরা যাতে আদালতে ন্যায় না পান, তা নিশ্চিত করেছিল তারা। সংবাদমাধ্যমের লেখালিখির উপর জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। ৩৮তম, ৩৯তম, ৪০তম, ৪১তম এবং ৪২তম সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত রাখা'।