যেদিকে দেখা যায় শুধু মানুষের মাথা আর মাথা। সমাগম হয়েছে লাখ লাখ মানুষের। সংখ্যাটা কত তা এখনই বলতে পারছে না উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। তবে কোটি ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই প্রয়াগরাজে ভিড় জমতে শুরু করেছে। কেউ তাঁবুতে রয়েছেন কেউ বা হোটেলে। বিচ্ছিন্নভাবে থাকায় ভিড়টা গতকাল পর্যন্ত টের পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার শাহি স্নানের সময় অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বিশ্ববাসী। এজন্যই বোধহয় পৃথিবীর সবথেকে বড় ধর্মীয় সমাবেশ বলা হয় মহাকুম্ভ-কে।
গতরাত থেকেই গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গমস্থল ত্রিবেণীতে মানুষের জমায়েত শুরু হয়। সূর্যের আলো ফোটার আগেই সেখানে হাজির হয় বহু ভক্ত। রাতের আঁধারে বোঝা যায়নি কত মানুষ এসেছে। তবে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার হয়ে যায়, আট থেকে আশি, সবাই মিলেমিশে একাকার শাহি স্নানের জন্য। দিন যত পরিষ্কার হতে থাকে ততই বাড়তে থাকে ভিড়। পৌষ পূর্ণিমার পূণ্য তিথিতে গঙ্গায় একবার ডুব দিতে কে না চায়! উদ্দেশ্য মোক্ষ লাভ। সেজন্যই তো কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা হিন্দুরা এসেছে এখানে।
সোমবার সকাল আটটায় ছিল প্রথম শাহি স্নান। এই সময় প্রায় ৬০ লাখ ভক্ত গঙ্গাস্নান সেরেছে বলে জানিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন। মেলা শুরুর আগে মনে করা হচ্ছিল, ৪০ কোটি জনসমাগম হতে পারে। তবে প্রথম দিন ভিড়ের বহর দেখে আন্দাজ করা হচ্ছে, ভিড় ছাড়াতে পারে ৪৫ কোটি। আর শুধু দেশ থেকে তো নয়, বিদেশ থেকেও বহু মানুষ আসতে শুরু করেছে প্রয়াগরাজে।
মহাকুম্ভকে সফল করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না প্রশাসন। এক আধিকারিক জানান, ৪৫ দিনের এই মেলার বাজেট ৭ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ১৫ লক্ষ বিদেশি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলাকে সফল করতে কেন্দ্রীয় সরকারও সবরকমের সাহায্য করছে।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পূর্ণার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে জলের তলায় ড্রোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জলে মোতায়েন থাকবে ৭০০ বোট, কয়েক হাজার জলপুলিশ। যে কোনও দুর্ঘটনার মোকাবিলার জন্য সবসময় প্রস্তুত এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ।
এখন টানা ৪৫ দিন ধরে সেখানে চলবে নাচ-গান-ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বলিউড তারকারা আসবে, ভজন-গঙ্গা আরতি চলবে, কীর্তনে মুখরিত হবে চারপাশ। কোটি কোটি মানুষ আসবে নিজের নিজের বাসনা নিয়ে। দেড়মাস ধরে চলবে 'মহাকুম্ভযজ্ঞ'।