ঝাড়খণ্ডের এক পরিবার ২৭ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা তাঁদের এক প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার দাবি করেছে। তবে চমকপ্রদ বিষয় হল, যিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি আর আগের মানুষ নেই—এখন তিনি এক সন্ন্যাসী! এবারের মহাকুম্ভ মেলায় ঘটে গেল এই অলৌকিক পুনর্মিলন।
হারিয়ে যাওয়ার ২৭ বছরের গল্প
১৯৯৮ সালে পাটনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন গঙ্গাসাগর যাদব। তারপর থেকেই তাঁর সঙ্গে পরিবারের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রথমে সপ্তাহ, তারপর মাস, তারপর কেটে যায় বছর—কিন্তু গঙ্গাসাগরের কোনো খোঁজ মেলেনি। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা শেষ পর্যন্ত আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, হয়তো আর বেঁচেই নেই তিনি।
কিন্তু ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলায় এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে। পরিবারের কয়েকজন সদস্য সেখানে গিয়েছিলেন এবং তাঁরা হঠাৎ এক সাধুর দেখা পান, যার চেহারা অবিকল গঙ্গাসাগরের মতো। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছবি তুলে পাঠানো হয় পরিবারের কাছে।
গঙ্গাসাগর না বাবা রাজকুমার?
গঙ্গাসাগরের ভাই মুরলি জানান, ‘আমাদের আত্মীয়রা কুম্ভে গিয়ে এক সাধুর খোঁজ পান, যিনি দেখতে একেবারে আমার ভাইয়ের মতো। আমরা ছবি দেখে নিশ্চিত হই এবং সঙ্গে সঙ্গেই কুম্ভমেলায় যাই।’
কিন্তু রহস্য তখনই জটিল হয়ে ওঠে, যখন ওই সাধু নিজেকে গঙ্গাসাগর বলতে অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর নাম বাবা রাজকুমার এবং তিনি বারাণসীতে থাকেন। এমনকি, গঙ্গাসাগর নামের কাউকে তিনি চেনেন না বলেও জানান।
তবে মুরলি এবং তাঁর পরিবারের দাবি, এই সাধুই তাঁদের গঙ্গাসাগর। কারণ তাঁর শারীরিক গঠন, উঁচু দাঁত, কপালের পুরনো চোটের দাগ, হাঁটুতে কাটা চিহ্ন—সবই তাঁদের ভাইয়ের সঙ্গে মেলে।
ডিএনএ পরীক্ষার অপেক্ষায় পরিবার
এই দ্বিধা দূর করতে মুরলি জানিয়েছেন, তাঁরা কুম্ভমেলা শেষ হওয়ার পর ওই সাধুর ডিএনএ পরীক্ষা করাতে চান। যদি পরীক্ষার ফলে প্রমাণিত হয় যে তিনি আসলেই গঙ্গাসাগর, তাহলে তাঁরা তাঁকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে যদি ফলাফল অন্য কিছু ইঙ্গিত দেয়, তাহলে তাঁরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন।
বর্তমানে মুরলি এবং গঙ্গাসাগরের স্ত্রী কুম্ভমেলা থেকে ফিরে এসেছেন, তবে পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য সেখানে রয়ে গেছেন। তাঁরা ওই সাধুর ওপর নজর রাখছেন এবং অপেক্ষা করছেন চূড়ান্ত সত্য উদ্ঘাটনের।
মহাকুম্ভ: হারানো আত্মীয় ফিরে পাওয়ার মঞ্চ?
প্রতিবছর কুম্ভমেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন, আর এর মধ্যেই কখনো কখনো হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়দের খোঁজ মেলে। এবারের মহাকুম্ভেও ঘটল এমনই এক বিরল ঘটনা। এখন প্রশ্ন একটাই—গঙ্গাসাগর কি সত্যিই ফিরে এলেন, নাকি এই পুনর্মিলনের গল্প এক রহস্যই থেকে যাবে?