'টাকার বদলে সংসদে প্রশ্ন' ইস্যুতে তীব্র বিতর্ক চলছে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ঘিরে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে সংসদে প্রশ্নের বিনিময়ে ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে মোটা টাকা ঘুষ নিয়েছেন মহুয়া। গোটা মামলাটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বস্তুত, INDIA জোটে কংগ্রেস আদানি-ইস্যুতে যতটা আক্রমণাত্মক, তৃণমূল কংগ্রেসকে কিন্তু সেই ভাবে আক্রমণাত্মক হতে দেখা যায়নি এখনও।
তারই মধ্যে মহুয়া মৈত্র বিতর্ক কি অস্বস্তি বাড়াল তৃণমূলের? মহুয়া ইস্যুতে তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের কী অবস্থান? কী চলছে অন্দরে? দেখে নেওয়া যাক ১০টি পয়েন্টে।
১. প্রথমত, দিল্লির রাজনীতিতে মহুয়া মৈত্রের কার্যকলাপে আদতেই খুশি নন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মহুয়া বুদ্ধিমতি, শিক্ষিত, দুর্দান্ত শিক্ষাগতযোগ্যতা। তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব মহুয়ার এই ঝকঝকে কেরিয়ারের প্রশংসাই করে। কিন্তু আদানি ইস্যুতে মহুয়ার নিজস্ব অবস্থানের কার্যকলাপের বিষয়ে মমতা বা অভিষেক, দুজনেই অবগত ছিলেন না।
২. মহুয়া মৈত্রের বিতর্কে সম্পূর্ণ দূরত্ব বজায় রাখছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। সমর্থনও জানানো হয়নি আবার বিরোধিতাও করা হয়নি। দলের অন্দরে অভিষেক স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, যেহেতু সব অভিযোগ মহুয়ার বিরুদ্ধে। তাই মহুয়া নিজেই তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি দিক। দল এ বিষয়ে জড়াবে না।
৩. দলের শীর্ষনেতৃত্বকে মহুয়া বলেছেন, তিনি বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী হীরানন্দনের বিরুদ্ধেও। তৃণমূল অপেক্ষা করছে আদালতের রায়ের উপরে। আদালতের রায়ের উপরেই নির্ভর করছে তৃণমূল কংগ্রেস মহুয়ার বিষয়ে কী পদক্ষেপ করবে।
৪. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দুজনেই দুর্নীতি ও বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু শিল্প ও শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে নয় তৃণমূল। তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, যখন 2G দুর্নীতি ইস্যু হয়েছিল, তখন বিজেপি বিরোধী শিবিরে ছিল। তৃণমূল কিন্তু আম্বানিদের বিরোধিতা করেনি। SEBI ও অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে। গোটা ঘটনা না জেনে তৃণমূলের উচিত নয় আদানিদের বিরুদ্ধে চলে যাওয়া।
৫. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। বাংলায় একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে আদানি গোষ্ঠী। তারমধ্যে নতুন বন্দরও আছে। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বাংলায় বিনিয়োগের বিষয়ে কথাও বলেছেন।
৬. ২০১৪ সালে জিতে নরেন্দ্র মোদী যখন প্রথমবার লোকসভায় প্রবেশ করলেন, তখন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চিত্কার করেছিলেন, 'মোদীজি আ রহে হ্যায়, পিছে পিছে আদানি আ রহে হ্যায়।' তখনও যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মমতা। কল্যাণকে ডেকে বলে দিয়েছিলেন, এই ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না।
৭. সম্প্রতি মুম্বইয়ে INDIA জোটের মিটিংয়ে জোটের মঞ্চে সাংবাদিক সম্মেলনে আদানি গোষ্ঠীকে আক্রমণ করেছিলেন রাহুল গান্ধী। মমতার সঙ্গে আলোচনা না করেই। মমতা সেই সাংবাজিক সম্মেলনের বিরোধিতাই করেছিলেন। তৃণমূল বলেছিল, বিরোধী জোটের অবস্থান হওয়া উচিত মোদী-বিরোধিতা। আদানি-বিরোধিতা নয়। জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত জোটের।
৮. সিবিআই ও ইডি-র সক্রিয়তা প্রসঙ্গেও তৃণমূলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া হল, এটি কোনও ব্যক্তিগত ইস্যু নয়। এজেন্সিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার জাতীয় ইস্যু।
৯. হীরানন্দানির হলফনামার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল মনে করে, নিশিকান্ত ও মহুয়ার ব্যক্তিগত তিক্ততা নতুন নয়। সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতেও নিশিকান্ত ও মহুয়া বহু বিষয়ে একে অপরকে নানা ভাবে আক্রমণ করেন। ওই কমিটির চেয়ারম্যান শশী থারুর বরাবরই মহুয়াকে সমর্থন করে এসেছেন। শশীর সঙ্গে মহুয়ার সম্পর্ক খুবই ভাল।
১০. মহুয়াকে মমতা একাধিক বার সতর্ক করেছেন, লুটিয়েন্স দিল্লির রাজনীতি বিনোদনের পেজ থ্রি-র মতো নয়। খুব চোখকান খোলা রেখে রাজনীতিটা করতে হয়।
এখন বিষয় হল, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পাবেন মহুয়া মৈত্র? তৃণমূল সূত্রের খবর, মহুয়ার টিকিট পাওয়া কঠিন।