ফের অশান্ত মণিপুর। নতুন করে হিংসা ছড়াল সে রাজ্যের টেংনুপাল জেলায়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে অভিযান শুরু করে অসম রাইফেলস। গোটা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৩টি মৃতদেহ। নিহতদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
গত ৩ ডিসেম্বর টেংনুপাল জেলার কুকি-জো উপজাতি গোষ্ঠীগুলি ভারত সরকার এবং ইউএনএলইএফ-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। সাত মাস পর রবিবার রাজ্যে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে জেলার সীমানাবর্তী এলাকাগুলিতে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইন্টারনেটের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে ঘৃণাভাষণ ছড়িয়ে পড়ায় ফের ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
গত ৬ মাস ধরে জ্বলছে মণিপুর। ৩ মে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মণিপুর (ATSUM) 'আদিবাসী ঐক্য মার্চ' বের করে। চুড়াচাঁদপুরের তোরবাং এলাকায় মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিরোধিতায় বেরোয় মিছিল। সেখান থেকে হিংসার সূত্রপাত। বহুদিন ধরেই মেইতই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি (এসটি) মর্যাদা দেওয়ার দাবি উঠেছে। ওই মিছিল চলাকালীন সেই সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যা নাগাদ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
মেইতেইরা কেন উপজাতির মর্যাদা দাবি করছে?
মণিপুরে মেইতই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ৫৩ শতাংশের বেশি। তাঁরা অ-উপজাতি সম্প্রদায়, বেশিরভাগই হিন্দু। কুকি এবং নাগা জনসংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। রাজ্যে এত বড় জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, মেইতেই সম্প্রদায় কেবল উপত্যকায় বসতি স্থাপন করতে পারে। মণিপুরের ৯০ শতাংশের বেশি এলাকা পাহাড়ি। মাত্র ১০ শতাংশ উপত্যকা। নাগা এবং কুকি সম্প্রদায় পাহাড়ি অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। উপত্যকায় মেইতেই আধিপত্য। মণিপুরের আইন অনুযায়ী, উপত্যকায় বসতি স্থাপন করা মেইতেই সম্প্রদায় পার্বত্য অঞ্চলে বসতি বা জমি কিনতে পারে না। তবে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী কুকি এবং নাগা উপজাতি সম্প্রদায় উপত্যকায় বসতি স্থাপন এবং জমি কিনতে পারে। মোদ্দা কথা, ৫৩ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ এলাকায় বসবাস করতে পারে। কিন্তু ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি এলাকায় থাকতে পারে।