অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, ভারতের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা। আজ, ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্খার গ্রহণ করেন। ৭৪ বছর বয়সী মিঠুন চক্রবর্তী এই পুরস্কার গ্রহণ করার সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এবং তাঁর সংগ্রামে ভরা জীবনের অভিজ্ঞতার কথা শোনান। বিশেষত, তিনি গায়ের রঙের জন্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যে অসম্মানের মুখোমুখি হয়েছিলেন তা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন এদিন।
মিঠুন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মে কালা রঙ নাহি চলেগা।’ আমাকে যতটা সম্ভব অপমান করা হয়েছে।” তাঁর চেহারার কারণে তাঁকে সিনেমা জগতে বহুবার অস্বীকৃত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অসম্মান তাঁকে থামাতে পারেনি। বরং তাঁর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আরও জোরালো হয়েছিল। তিনি জানান যে, একসময় ঈশ্বরের কাছে তাঁর চেহারা নিয়ে অভিযোগ করলেও, পরে তিনি নিজের নাচের প্রতিভার উপর গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, "আমি চেয়েছিলাম যে লোকেরা আমার মুখ নয়, আমার পায়ের দিকে তাকাবে।"
ভারতের ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ হিসেবে খ্যাত এই অভিনেতা তাঁর নাচের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করেন। মিঠুনের অভিনয় ও নাচের দক্ষতা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, যা তাঁকে জাতীয় পুরস্কার সহ অসংখ্য সম্মান এনে দিয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁর মধ্যে এক ধরনের অহংকার জন্ম নিয়েছিল, যা তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। তিনি আল পাচিনোর মতো আচরণ শুরু করেছিলেন, কিন্তু শীঘ্রই বুঝতে পারেন, এমন মনোভাব নিয়ে তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে পারবেন না। তাই তিনি নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনেন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে থাকেন।
তরুণদের উদ্দেশ্যে মিঠুন বলেন, "আমি যদি এটা করতে পারি, তবে যে কেউ করতে পারে।" তিনি স্বপ্ন দেখা কখনো বন্ধ না করার পরামর্শ দেন এবং বলেন, “তুমি ঘুমোও, কিন্তু তোমার স্বপ্নকে ঘুমোতে দিও না।” তাঁর এই বক্তব্য আরও একবার প্রমাণ করে যে মিঠুন চক্রবর্তী শুধু একজন প্রতিভাবান অভিনেতা নয়, একজন সত্যিকারের অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্বও বটে।
এই বক্তৃতার মাধ্যমে মিঠুন চক্রবর্তী তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো তুলে ধরেন এবং ইন্ডাস্ট্রির নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করেন। তাঁর সংগ্রাম, সাফল্য এবং আত্মবিশ্বাসের এই কাহিনী সকলের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বয়ে আনে—কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ়তা কখনো বৃথা যায় না।