
এ যেন আস্ত সিনেমা। কার্যত ফিল্মি কায়দায় মুম্বইয়ের পওয়াইের স্টুডিয়ো থেকে ১৭ কিশোরকে উদ্ধার করল পুলিশ। কম্যান্ডোদের গুলিতে মৃত্যুও হয়েছে পণবন্দী করা যুবক রোহিত আর্যর। গোটা অপারেশন সফল করলেন ৮ জন কমান্ডো। সময় লেগেছে মাত্র ৩৫ মিনিট।
প্রতিদিনের মতো পওয়াইের ওই স্টুডিয়োতে অডিশন দিতে যায় কিশোররা। প্রায় ৮০ জনকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে রোহিত। তবে আটকে রাখে ১৭ জনকে। তারপরই ভিডিওবার্তায় হুমকি দেয়। জানায়, তার দাবি না মানা হলে গোটা স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। কিশোরদের মৃত্যুর দায় সে নেবে না। খবর দাবানলের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। তৎপর হয় পুলিশ।
কীভাবে অপারেশন সাকসেসফুল করল পুলিশ?
বন্দিদের নিরাপদে মুক্তির জন্য প্রথমেই ৮ সদস্যের কুইক অ্যাকশন টিম বানায় মুম্বই পুলিশ। তারপর অপারেশন শুরু করে। মূল দরজা দিয়ে না প্রবেশ করে বাথরুম দিয়ে অডিশন কক্ষে ঢোকেন পুলিশকর্মীরা। সূত্রের খবর, যাতে কোনও হইচই না হয় সেজন্য সবার নজর বাঁচিয়ে বাথরুমের রাস্তাকে বেছে নেন তদন্তকারীরা। তাতে সফলও হন।
অডিশন কক্ষে প্রবেশের পর কুইক অ্যাকশন টিমের সদস্যরা দেখেন, রোহিতের হাতে বন্দি ১৭ কিশোর। প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে রোহিতকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানান। তবে তা ব্যর্থ হয়। একটা সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় অভিযুক্ত। উত্তরও পায় সে। গুলি লাগে শরীরে। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরইমধ্যে পণবন্দিদের নিরাপদে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। তারপর তাদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। অভিভাবকরাও যান তাদের সঙ্গে।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, কুইক অ্যাকশন টিম সদস্যরা ভিতরে প্রবেশ করার পরই দেখতে পান, বন্দিরা ঘরের এক কোণে বসে। তাদের চোখেমুখে ভয়। নিস্তব্ধতা। তাদের যেন কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর ছিল উদ্ধারকারী দলের। সেজন্য পরিকল্পনা বাইরে থেকেই করে গিয়েছিলেন তাঁরা। সব কিছু সেই মোতাবেক হয়েছে।
কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত?
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো। পওয়াই পুলিশের কাছে একটি ফোন আসে। ওপ্রান্ত থেকে জানানো হয়, একজন ব্যক্তি বহু কিশোরকে পণবন্দি করেছে। এরপর পুলিশ যায় সেখানে। ঘিরে ফেলে এলাকা। সাধারণের প্রবেশাধিকার নিষেধ করা হয়। রোহিতকে বোঝানোর চেষ্টা করেন পুলিশকর্মীরা। তবে সে জানিয়ে দেয়, তার দাবি মানতে হবে। সে কথা বলতে চায়। আর তার দাবি না মানা পর্যন্ত কিশোররা তার কাছেই থাকবে। সে কোনও মূল্য়ে তাদের মুক্তি দেবে না।
রোহিত কে?
রোহিত আর্য পুণের বাসিন্দা। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপক কেসরকারের আমলে শিক্ষা বিভাগ থেকে সে একটি টেন্ডার পায়। তবে রোহিতের অভিযোগ, তাকে টাকা দেওয়া হয়নি। ফলে অর্থনৈতিক সমস্যা হয়েছিল। সেজন্য ওই মন্ত্রীর বাড়ির বাইরে ধর্না দিয়েছিল সে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব হয়েছিল। তারপরও টাকা পরিশোধ করা হয়নি।