
ওড়িশার সাম্বলপুর জেলায় ১৯ বছর বয়সী জুয়েল শেখ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা এক সহকর্মীর অভিযোগ, হামলার সূত্রপাত হয় পরিচয়পত্র দেখানোর দাবিকে কেন্দ্র করে। অভিযুক্তরা শ্রমিকদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে সন্দেহ করেছিল বলে দাবি।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আহত শ্রমিক মাজহার থান নিহতের সহকর্মী। তিনি জানান, প্রথমে দুষ্কৃতীরা তাদের কাছে বিড়ি চায়, তারপর আধার কার্ড দেখাতে বলে। পিটিআই-কে তিনি বলেন, 'প্রথমে বিড়ি চাইল, তারপর আমাদের আধার কার্ড দেখতে চাইল। পরে তারা জুয়েল শেখের মাথা শক্ত কোনও কিছুর উপর আছড়ে দেয়।' গুরুতর আহত জুয়েল শেখ সম্বলপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার রাতে সম্বলপুরের শান্তিনগর এলাকায়। সেখানে একটি নির্মাণস্থলে কাজ করতেন জুয়েল শেখ ও অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকরা। নিজেদের থাকার স্থলেই ছিলেন তাঁরা ঘটনার রাতে। রান্না করছিলেন। সে সময়েই ৬ জন ব্যক্তি এসে তাঁদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অপর এক শ্রমিক নিজামুদ্দিন খান অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা বারবার তাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে গালিগালাজ করে এবং এরপর জুয়েল শেখ ও আরও দু’জনকে মারধর করে। আহত দুই শ্রমিক এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ইতিমধ্যেই ৬ জন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, বিড়ি নিয়ে বচসা থেকেই মারামারি শুরু হয় এবং এর সঙ্গে শ্রমিকদের পরিচয় বা ধর্মীয় কোনও বিষয় জড়িত নয়।
উত্তরাঞ্চলের আইজিপি হিমাংশু কুমার লাল বলেন, 'এই খুনের সঙ্গে নিহত ব্যক্তি বাঙালি না বাংলাদেশি, এই নিয়ে কোনও বিষয় নেই।' এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক জানান, ভিন্রাজ্যের শ্রমিকরা বহু বছর ধরেই ওই এলাকায় থাকতেন এবং অভিযুক্তদের চিনতেন। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে BJP-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। দলের দাবি, BJP-র ধারাবাহিক 'বাঙালি বিরোধী' প্রচারের ফলেই এই ঘটনাটি ঘটেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, 'সম্বলপুরে এক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা BJP-র দীর্ঘদিনের বাঙালি বিরোধী প্রচারের ফল। এক ভারতীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। অথচ বিশ্বাস করানো হচ্ছে, বাঙালিরা অনুপ্রবেশকারী এবং তাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে। বছরের পর বছর BJP নেতারা বাঙালি ভাষাভাষী ভারতীয়দের অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সেই বিষাক্ত বর্ণা আজ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ হচ্ছে। যেখানে কেউ নিজেকে অভিবাসন অফিসার এবং ফাঁসির জল্লাদ মনে করছে।'