উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের দেহরি গ্রামে একদল মুসলিম পরিবারের নামের সঙ্গে হিন্দু ব্রাহ্মণ উপাধি গ্রহণ করার বিষয়টি বর্তমানে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই পরিবর্তনের প্রধান মুখ হচ্ছেন নওশাদ আহমেদ, যিনি নিজের নামের সঙ্গে "দুবে" যোগ করে পরিচিত হয়েছেন। তাকে গ্রামের লোকেরা "দুবে জি" বলে সম্বোধন করেন।
কেন এই পরিবর্তন?
নওশাদ আহমেদের মতে, তাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ, যারা সাত-আট প্রজন্ম আগে ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন। তবে তাদের শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং নিজের প্রকৃত পরিচয় ফিরিয়ে আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নওশাদ বলেন, “আমরা জানতাম আমাদের উপাধি ধার করা। শেখ, খান বা মির্জা আরবি, মঙ্গোল বা তুর্কি উপাধি। আমরা আমাদের প্রকৃত ব্রাহ্মণ উপাধিই গ্রহণ করছি।”
পরিবার ও শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব
গ্রাম থেকে মাধ্যমিক পাশ করা নওশাদ জীবিকার সন্ধানে কাতারে পাড়ি জমান। সেখানেই উর্দুতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তার এক মেয়ে এলএলএম-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের টপার, অন্য মেয়ে এমএসসি পাস করেছেন। ছেলেও এমবিএ করে বিদেশে কর্মরত।
সমাজের প্রতিক্রিয়া ও বাধা
হিন্দু উপাধি গ্রহণের কারণে নওশাদ ও তার পরিবার কিছু হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন। মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে পাঠানোর সময়ও তাকে ফতোয়ার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে নওশাদ স্পষ্ট করেছেন যে তিনি ইসলাম ত্যাগ করেননি, বরং ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে নিজের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছেন।
মুসলিম ব্রাহ্মণ পরিচয়ের সংজ্ঞা
নওশাদ বলেন, “আমরা ইসলাম ত্যাগ করিনি। প্রতিটি ধর্মকে সম্মান করি এবং কাউকে ছোট করি না। গ্রামের মানুষ আমাদের ‘মুসলিম ব্রাহ্মণ’ বলে ডাকে। আমরা গরু পালন করি, তিলক পরি, কিন্তু আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রেখেছি।”
সাম্প্রতিক ঘটনা
সম্প্রতি তার ভাইজির বিয়েতে ছাপানো কার্ডে "নওশাদ আহমেদ দুবে" লেখা হয়। এটি দেখে স্থানীয়রা বিস্মিত হন। অনেকের কাছে এটি বিরল একটি ঘটনা, যেখানে একজন মুসলমান নিজের পরিচয়ে হিন্দু ব্রাহ্মণ উপাধি ব্যবহার করছেন।
সমাজের প্রতিফলন
দেহরি গ্রামে এমন নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ধর্মীয় ও সামাজিক পরিচয়ের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরেছে। এটি একদিকে যেমন ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান, অন্যদিকে ধর্মীয় সহনশীলতার উদাহরণ হয়ে উঠছে। তবে এর পাশাপাশি নানা বিতর্ক ও প্রশ্নও উঠে আসছে।