রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ থেকে উত্থান। তারপর গুজরাতের সাধারণ বিজেপি নেতা। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী। 'সাধারণ' থেকে 'অসাধারণ' হয়ে ওঠার পথে সঙ্ঘের অবদান কতটা? জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে কথাবার্তায় নিজের জীবনে সঙ্ঘের ভূমিকার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিবিধ বিষয়ে তিনি খোলাখুলি আলোচনা করেছেন। লেক্স মোদীর কাছে জানতে চান, আপনি ৮ বছর বয়সে আপনি আরএসএস-এ যোগ দিয়েছিলেন। সেই থেকে আপনি হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধারণাকে সমর্থন করেন। আরএসএস সম্পর্কে কী বলবেন? আপনার উপর এবং আপনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশে ওই সংগঠনের কী প্রভাব ছিল?
প্রধানমন্ত্রী মোদী জবাব দেন,'ছোটবেলা থেকেই আমার অভ্যাস ছিল যে আমি সবসময় কোনও না কোনও কাজে ব্যস্ত থাকতাম। আমার মনে পড়ছে, মাকোশি নামে একজন ছিলেন। তাঁর পুরো নাম আমার মনে পড়ছে না। সেবাদলের অংশ ছিলেন। ঢোলের মতো কিছু একটা রাখতেন। শক্তিশালী কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান গাইতেন। আমাদের গ্রামে এসে গান গাইতেন। পাগলের মতো তাঁর পিছনে ছুটতাম, শুধু তাঁর গান শোনার জন্য। আমি সারা রাত ধরে দেশাত্মবোধক গান শুনতাম। এটা উপভোগ করতাম। কেন মজা হত, সেটা তখন বুঝতাম না'।
মোদী বলেন,'আমাদের গ্রামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একটি শাখা ছিল। সেখানে দেশাত্মবোধক গান বাজানো হত। সেই গানগুলির কিছু জিনিস আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিল। আর এভাবেই আমি আরএসএসের অংশ হয়ে গেলাম। আরএসএস-এ আমাদের যে মূল্যবোধ দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে একটি ছিল যে আপনি যা-ই করুন না কেন, তার একটি উদ্দেশ্য থাকা উচিত। জাতির জন্য অবদান রাখার জন্য করুন। যেমন আমি যদি পড়াশোনা করি, তাহলে আমার এতটুকু পড়া উচিত যে তা দেশের জন্য উপকারী। যখন আমি ব্যায়াম করি, তখন আমার এতটা করা উচিত যেন আমার শরীর দেশের জন্য কাজে লাগার জন্য তৈরি থাকে। সঙ্ঘের লোকেরা এই শিক্ষাই দিয়ে যাচ্ছে। সঙ্ঘ খুব বড় সংগঠন। শততম বর্ষের কাছাকাছি। এত বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্ভবত বিশ্বের আর কোথাও নেই। কোটি কোটি মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সঙ্ঘকে বোঝা এত সহজ নয়। এর কাজ প্রকৃত অর্থে বোঝার জন্য অনেক করতে হবে। সর্বোপরি, সঙ্ঘ আপনাকে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয় যা সত্যিকার অর্থে জীবনের উদ্দেশ্য বলা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন,'দেশই অগ্রাধিকার এবং জনসেবাই ঈশ্বরের সেবা। বৈদিক যুগ থেকে এটাই বলা হয়ে আসছে। আমাদের ঋষিরা এটাই বলেছেন। বিবেকানন্দও এটাই বলেছেন। সঙ্ঘ লোকেরাও তাই বলেন। তাই স্বেচ্ছাসেবককে বলা হয় যে, সঙ্ঘ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজের জন্য কিছু করা উচিত। সেই চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে নানা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। কিছু স্বেচ্ছাসেবক সেবা ভারতী নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সংস্থাটি বস্তিগুলিতে সেবাপ্রদান। সেখানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ বাস করে। আমার জানা মতে, প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার সেবা দেয় এই সংগঠন। কোনও সরকারি সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র জনসাধারণের সেবা। শিশুদের শিক্ষা দেয়, তাঁদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়, মূল্যবোধ গড়ে তোলে। এটা কোনও ছোট ব্যাপার নয়'।