Advertisement

নেতাজি @ ১২৫ : নরেন-ঠাকুরের আদর্শে ষোলোতেই মজেছিলেন সুভাষ, বাকিটা...

প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রফেশন ওটিনের ভারত বিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সুভাষকে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এরপরই আস্তে আস্তে তাঁর জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি জাগতে শুরু করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। অবশেষে ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 13 Jan 2021,
  • अपडेटेड 7:00 PM IST
  • ১৯০২ সালে সুভাষকে কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল
  • ১৬ বছর বয়স থেকেই সুভাষ স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রী রামকৃষ্ণের বিভিন্ন বই পড়াশোনা করতেন
  • ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনের মুখ হিসেবে যদি কাউকে তুলে ধরতে হয়, তাহলে প্রথমের সারিতেই থাকবেন এই বাংলার সুভাষ। আগামী ২৩ জানুয়ারি এই মহানায়কের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। আসুন, নেতাজির জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে আরও একবার জেনে নেওয়া যাক।

১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। জানকীনাথ বসু এবং প্রভাবতী দত্ত বসুর সংসারে ১৪ সন্তানের মধ্যে নবম ছিলেন সুভাষ। ছোটোবেলা থেকে যথেষ্ট স্বচ্ছ্বল পরিবারে তিনি বড় হয়ে ওঠেন।

একটু বড় হতেই ১৯০২ সালে সুভাষকে কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর ভাইবোনেরাও ওই একই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। আজ এই স্কুলটাকে আমরা স্টুয়ার্ট হাই স্কুল নামেই চিনি। তা সে যাইহোক, ১৯০৯ সাল পর্যন্ত ব্যাপটিস্ট মিশনের অধীনে চালিত এই স্কুলে পড়াশোনা করেন সুভাষ। এরপর তিনি রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৯১৩ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজেও পড়াশোনা করেন। ১৬ বছর বয়স থেকেই সুভাষ স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রী রামকৃষ্ণের বিভিন্ন বই পড়াশোনা করতেন। আর সেকারণেই তিনি এই দুই মনীষীর ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর শিক্ষার থেকে ধর্ম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত

সেইসময় ভারতীয়দের নিয়ে কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে হামেশাই ব্রিটিশরা কটূক্তি করতেন। এমনকী মাঠেঘাটে ভারতীয়দের দেখতে পেলে অপমান করতেও ছাড়তেন না। একদিকে ব্রিটিশদের অপমান এবং অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু সুভাষ চন্দ্রের চিন্তাভাবনাকে বদলাতে শুরু করেছিল।

Advertisement

ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রফেশন ওটিনের ভারত বিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সুভাষকে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এরপরই আস্তে আস্তে তাঁর জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি জাগতে শুরু করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। অবশেষে ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভারত ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি দেন সুভাষ। ২০ অক্টোবর পৌঁছন লন্ডনে। বাবা জানকীনাথ বসুকে তিনি কথা দিয়েছিলেন যে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (ICS) পরীক্ষার প্রস্তুতি তিনি নেবেন এবং এই পরীক্ষায় বসবেন। লন্ডনে সুভাষ তাঁর ভাই সতীশের সঙ্গে বেলসাইজ় পার্কে থাকতেন। সেখান থেকেই ICS পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। 

ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত

ঐতিহাসিক লিওনার্ড এ গর্ডন এই বিষয়ে বলেছেন, "সুভাষ যে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় আবেদন করেছিল, সেটা স্পষ্টত দেখিয়ে দেয় যে সেইসময় বসু পরিবার বাংলার সমাজে কতটা বিত্তবান ছিল। এমনকী রেফারেন্স হিসেবে সুভাষ যে দু'জনের নাম উল্লেখ করেছিল, তারাও কম বিত্তশালী ছিলেন না। একজন ছিলেন লর্ড সিনহা। অবিভক্ত ভারতে তিনিই প্রথম ‘লর্ড’ উপাধি লাভ করেন। ভারতের প্রথম অ্যাডভোকেট জেনারেল হন। হয়েছিলেন নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভাপতি। প্রভাবশালী মানুষজনের সঙ্গে তাঁর ওঠা-বসা ছিল। রবি ঠাকুরের সঙ্গেও ছিল বন্ধুত্ব। অপরজন ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ বসু। তিনিও কলকাতার স্বনামধন্য সলিসিটর ছিলেন। এমনকী তিনি লন্ডনে ভারতীয় কৌঁসুলির সদস্যও ছিলেন।"

অবশেষে সুভাষ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। যদিও ভর্তির নির্দিষ্ট সময় তিনি অতিক্রম করে ফেলেছিলেন। তবে কয়েকজন ভারতীয় ছাত্র এবং ফিৎজ়উইলিয়াম হলেন সেন্সর রেড্ডাওয়ে মহাশয়ের সাহায্যে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অনুসারে সুভাষ ১৯১৯ সালের ১৯ নভেম্বর ভর্তি হন। তিনি মানসিক এবং নৈতিক বিজ্ঞানের বিষয়টি বেছে নেন এবং পাশাপাশি সমানতালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন।

অবশেষে ICS পরীক্ষায় তিনি চতুর্থ স্থান অর্জন করেন এবং নির্বাচিত হন। কিন্তু, একটা বিদেশি সরকারের অর্থাৎ ব্রিটিশদের অধীনে কাজ করতে তিনি রাজি ছিলেন না। ১৯২১ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি সেই চাকরি ব্রিটিশদের মুখেই ছুঁড়ে দিয়ে ভারতে ফিরে আসেন।

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement