কেরলে কোঝিকোড়ের ১২ বছরের ছেলেটি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় পয়লা সেপ্টেম্বর। তার আগে দুটি হাসপাতাল ঘোরা হয়ে গেছে, কিন্তু লাভ হয়নি। এনসেফালাইটিসের চিকিত্সা চলছিল। ডাক্তাররা রক্তের নমুনা পাঠান পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে। সেখানেই ধরা পড়ে, ছেলেটি Nipah virus-এ আক্রান্ত।
৫ সেপ্টেম্বর কেরলের হাসপাতালে মৃত্যু হয় বাচ্চাটির। করোনার (Coronavirus) এই পরিস্থিতিতে কোনও ক্রমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলেও, নিপা ভাইরাসের ওই খবরে রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিয়েছে কেরল থেকে নয়াদিল্লি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: Nipah Virus: ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের মধ্যে কেরালায় ফের নিপার হানা! মৃত ১২ বছরের
Nipah virus নিয়ে কেন দুঃশ্চিন্তা?
এই ভাইরাসটির সবচেয়ে মারাত্মক দিক হল, একবার ছড়াতে শুরু করলে নিয়ন্ত্রণে আনা দুরহ হয়ে যায়। COVID-19-এ যেখানে মৃত্যুর হার ১ থেকে ২ শতাংশ, সেখানে নিপা ভাইরাসে মৃত্যুর হার ছুঁতে পারে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত।
কোথা থেকে নিপা ভাইরাস ছড়ায়?
নিপা ভাইরাস ছড়ায় ফল বাদুড় থেকে। একটি গবেষণা বলছে, এই ভাইরাস মানুষের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হলেও বাদুড়ের ক্ষেত্রে নয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, মানুষের শরীরে নিপা ভাইরাস সংক্রমণ হয় শুয়োর থেকে। আবার কিছু গবেষণা বলছে, কুকুর, বেড়াল বা ইঁদুরের মতো প্রাণী থেকেও সংক্রমণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: মৃতদেহে কতক্ষণ পর্যন্ত সক্রিয় থাকে করোনাভাইরাস? জানালেন AIIMS চিকিৎসক
কী ভাবে নিপা ভাইরাস ছড়ায়?
SARS-CoV-2 (COVID-19)-এর থেকে অনেক বেশি সংক্রমণাত্মক নিপা ভাইরাস। এই ভাইরাসটি জুনটিক (zoonotic)। অর্থাত্ মানুষের থেকে অন্যান্য প্রাণীতে ছড়াতে পারে আবার উল্টোটাও।
কোনও ফলে নিপা ভাইরাস বহনকারী বাদুড়ের লালা বা প্রস্রাব থেকে নিপা ছড়ায়। মূলতঃ দূষিত খাবার বা পানীয় থেকেই মানুষের শরীরে নিরপা সংক্রমণ হতে পারে।
নিপা ভাইরাস আক্রান্ত কোনও মানুষের লালা, রক্ত বা প্রস্রাব থেকে সহজেই ছড়িয়ে যায় ভাইরাসটি। বিশ্বে কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাদুড় রয়েছে এমন গাছে ওঠার ফলেও কোনও ব্যক্তি নিপা আক্রান্ত হয়েছেন।
কী উপসর্গ?
WHO-র তথ্য অনুযায়ী, নিপা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও কিছু উপসর্গহীন রোগী থাকতে পারে। তবে যাদের উপসর্গ থাকে, সেগুলি হল, জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, বমি ও গলা ফুলে যাওয়া, বাড়াবাড়ি রকমের এনসেফালাইটিস, ঝিমুনি, শ্বাসকষ্ট। এমনকী এনসেফালাইটিস এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে।
নিপা আক্রান্ত হওয়ার পরে কতদিনের মধ্যে অসুস্থতা শুরু হয়?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই উপসর্গ শুরু হয়ে যায়। WHO বলছে, ৪৫ দিন পর্যন্তও ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
কোনও চিকিত্সা আছে?
Nipah ভাইরাসের কোনও চিকিত্সা নেই। COVID-19 চিকিত্সার মতোই চিকিত্সা করেন ডাক্তাররা।
মৃত্যুর সম্ভাবনা কতটা?
নিপা ভাইরাসের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত, WHO তথ্য অনুযায়ী। তাই কোনও জায়গায় নিপা ভাইরাস ছড়ালে সেই জায়গায় তড়িঘড়ি সংক্রমণ থামানোর ব্যবস্থা করে চিকিত্সা শুরু করলে, মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
ভারতে আগে নিপা ভাইরাস আক্রান্তের ঘটনা আছে?
২০১৮ সালে কেরলে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল নিপা ভাইরাসে। কোঝিকোড়, মলপ্পুরম জেলায় আক্রান্ত হয়েছিল। ২০১৯ সালে কোচিতে নিপা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। নিপায় দেশে প্রথম আক্রান্ত হয়েছিল ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে।
খবরটি ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন