লোকসভা নির্বাচনের আগে আজ, বৃহস্পতিবার মোদী সরকারের শেষ বাজেট। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তাই এবারের অন্তর্বর্তী বাজেটে জনসাধারণের প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে। সকাল ১১টায় বাজেট পেশ করা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সংসদ পৌঁছায় অর্থমন্ত্রীর কনভয়।
এদিন নির্মলা সীতারামন পরেছেন একটি নীল ও ঘিয়ে রঙের কম্বিনেশনের তসরের কাঁথা স্টিচের শাড়ি। নীল রঙা শাড়ির উপর ঘিয়ে রঙের সুতোয় কাঁথা স্টিচের কাজ রয়েছে এবং শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট ব্লাউজ পরেছেন অর্থমন্ত্রী।
ভারতীয় টেক্সটাইল নির্মলা সীতারামনের খুবই পছন্দের, একথা প্রায় সকলেরই জানা। প্রতিবারই বাজেট পেশ করার দিন, তাঁর শাড়ি ও স্টাইল স্টেটমেন্টের দিকে নজর থাকে সকলের। গত বছর তিনি পরেছিলেন নাভালাগুন্ডা এমব্রয়ডারির সঙ্গে একটি হাতে বোনা লাল ইল্কল শাড়ি। এটি কর্ণাটকের ধারওয়াড় থেকে মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর উপহার ছিল।
নির্মলা সীতারামনকে প্রায়ই দেখা যায় ঘিয়ে বা ক্রিম রঙা শাড়িতে। এজন্যে অনেকেই মনে করেন, তাঁর প্রিয় রং এটি। ২০২১ সালে তিনি একটি লাল এবং অফ-হোয়াইট পচমপল্লি শাড়ি পরেছিলেন। ২০২২বাজেট পেশের দিন সীতারামন বেছেছিলেন একটি মরিচা বাদামী রঙের বোমকাই শাড়ি। ২০২০ সালে, মন্ত্রীকে মাজেটের দিন দেখা গিয়েছিল একটি হলুদ ও সরু নীল কম্বিনেশনের সিল্কের শাড়িতে। ১০১৯ সালে, তিনি গোলাপী ও সোনালী পাড়ের মঙ্গলগিরি শাড়ি পরেছিলেন।
কাঁথা স্টিচের শাড়ির জন্ম
নির্মলা সীতারামন এবার যে শাড়িটি পরেছে, তার সঙ্গে পশ্চিমবাংলার বিশেষ যোগ রয়েছে। কাঁথা, ভারতের সূচিকর্মের প্রাচীনতম রূপগুলির মধ্যে একটি। এই কারুকাজ আজ লক্ষ লক্ষ দক্ষিণ এশীয় মহিলাদের জীবিকা। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, কাঁথা শিল্পের জন্ম বাংলার গ্রামে। শোনা যায় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বিলুপ্ত হয়ে যায় কাঁথা শিল্প। এরপর ১৯৪০ সাল নাগাদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রবধূ এই শিল্পটি পুনরুজ্জীবিত করেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ১৯৪৭ সাল নাগাদ ফের এই শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথেই যেতে বসেছিল। অবশেষে, বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের (১৯৭১) পর থেকে, কাঁথা একটি অত্যন্ত মূল্যবান এবং অত্যন্ত কাঙ্খিত শিল্প- তথা কারুশিল্প হিসাবে স্থান পায়।
কাঁথা স্টিচের শাড়ি কোথায় জনপ্রিয়?
ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশে সমানভাবে কাঁথা স্টিচের শাড়ি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার অন্তর্গত বোলপুর এবং শান্তিনিকেতন অঞ্চলে এই কাঁথা স্টিচ শাড়ি বুনন বহু মানুষের জীবিকা। এমনকী প্রত্যন্ত গ্রামে এখন মহিলাদের প্রধান জীবিকা হয়ে উঠেছে এই কাঁথা স্টিচ। শান্তিনিকেতনের খোয়াইয়ের হাটে কাঁথা স্টিচ শাড়ির সম্ভার নিয়ে পসরা বসান রাঙা মাটির দেশের ব্যবসায়ীরা। এখানকার তৈরি কাঁথা স্টিচের রকমারি শাড়িগুলি পঞ্জাব, মুম্বই, ব্যাঙ্গালুরু, দিল্লি সহ দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের যশোর জেলাতেও কাঁথা স্টিচের জনপ্রিয়তা বেশ লক্ষণীয়।
কীভাবে তৈরি হয় কাঁথা স্টিচের শাড়ি?
প্রথমে তাঁত মেশিনে মূল শাড়িটি বোনা হয়। এরপর তাঁতিদের থেকে সেই কাপড় এনে বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা হয়। নকশার মধ্যে থাকে- ফুল, পাতা, গাছ, পদ্ম, জাহাজ, সূর্য, চন্দ্র, ম্যান্ডেলা, রথ, কলসি, নৌকো, বিভিন্ন প্রাণী, মাছ, পালকি, আয়না ইত্যাদির অবয়। এরপর সেগুলির উপর রঙিন সুতা দিয়ে সেলাই করে তৈরি করা হয় কাঁথা স্টিচের শাড়ি। এই সেলাই পদ্ধতিকেই মূলত কাঁথা স্টিচ বলা হয়ে থাকে। কাঁথা স্টিচ সেলাই নির্ভর করে নকশার উপর।
কাঁথা স্টিচের শাড়ি তৈরি সময়
প্রধানত তিন ধরনের- তসর, সিল্ক এবং সুতির কাঁথা স্টিচের শাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। সুতির শাড়িতে এই নকশা খুব হালকা করা হয় বলে, সেখানে কাঁথা স্টিচের কাজ কম থাকে। সুতির কাঁথা স্টিচ শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে ১৫ দিন থেকে ১ মাস। অন্যদিকে তসরের এবং সিল্কের ক্ষেত্রে নকশা ভারী হয় অর্থাৎ গোটা শাড়ি জুড়ে এই নকশা অঙ্কিত থাকে। এটি ধরনের শাড়ি তৈরি করতে প্রায় ৪/৫ মাস সময় লাগে। তবে তসর এবং সিল্কের কাঁথা স্টিচ শাড়ির চাহিদা বেশি।
কাঁথা স্টিচের শাড়ির দাম
স্বাভাবিকভাবেই সুতির থেকে তসর বা সিল্কের কাঁথা স্টিচের শাড়ীর দাম বেশি। সুতির কাঁথা স্টিচের শাড়ি প্রায় ২.৫ হাজার টাকা থেকেই পাওয়া যায়। তসরের কাঁথা স্টিচের শাড়ি ১০ থেকে ২০ হাজার বা তার বেশি টাকা দামের হয় সাধারণত (পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে)।