মাত্র একদিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট এবং বিচারপতির বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তার রেশ কাটার আগেই ফের বিতর্কে জড়ালেন তিনি। এবার নিশানা করলেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের পক্ষে বলতে গিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ রীতিমতো বিতর্কের ঝড় তুললেন বিজেপি সাংসদ।
ভারতের ১৭তম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এসওয়াই কুরেশি। ২০১০ সালের ৩০ জুলাই থেকে ২০১২ সালের ১০ জুন পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এবার তাঁকে নিশানা করেই নিশিকান্ত দুবে বলেন, ‘উনি ইলেকশন কমিশনার ছিলেন না, মুসলিম কমিশনার ছিলেন।’ প্রাক্তন ইলেকশন কমিশনারের পোস্টের সমালোচনা করেই এমনটা বলেন তিনি।
নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ, কুরেশির মেয়াদকালেই ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড দেওয়া হয়েছিল। সেই সাঁওতাল পরগনা অংশ গোড্ডা (Godda) লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। নিশিকান্ত দুবে সেখানকারই সাংসদ।
মন্তব্যের সূত্রপাত কুরেশির এক এক্স পোস্ট থেকে। ওয়াকফ অ্যাক্টের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। লেখেন, ‘ওয়াকফ অ্যাক্ট নিঃসন্দেহে একটি গভীর ষড়যন্ত্র, এর উদ্দেশ্য মুসলিমদের জমি কেড়ে নেওয়া। আমি নিশ্চিত সুপ্রিম কোর্ট সেটা ধরে ফেলবে। সরকারপন্থী প্রচারযন্ত্র ভুল তথ্য ছড়ানোর কাজটা ভালই করছে।’
এই মন্তব্যের রিপ্লাই দিতে গিয়েই ইতিহাস টেনে আনেন নিশিকান্ত দুবে। লেখেন, ‘৭১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইসলাম আসে। তার আগে এই দেশ ছিল হিন্দু, আদিবাসী, জৈন বা বৌদ্ধ বিশ্বাসীদের। ১১৮৯ সালে বখতিয়ার খিলজি আমার গ্রাম বিক্রমশীলা পুড়িয়ে দিয়েছিল। বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়েই বিশ্বের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছিলেন অতীশ দীপঙ্কর। দেশকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইতিহাস পড়ুন—বিভাজনই তো পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল, এখন আর কোনও বিভাজন হবে না?’
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন নিশিকান্ত দুবে। তাঁর অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি নাকি দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা করছেন। সাংবিধানিক প্রশ্নও তোলেন তিনি। জানতে চান, কোন অনুচ্ছেদের বলে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারে যে, রাজ্যপালের পাঠানো কোনও আইন তিন মাসের মধ্যে মঞ্জুর বা বাতিল করতে হবে?
এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বিজেপি দলীয়ভাবে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা এক্স-এ লেখেন, ‘বিজেপির সঙ্গে সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং দীনেশ শর্মার মন্তব্যের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি তাঁদের ব্যক্তিগত মতামত। বিজেপি এমন মন্তব্যে বিশ্বাস করে না এবং এই ধরনের মন্তব্যকে সমর্থনও করে না। আমরা এটি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করি।’
শনিবারই এই বিতর্কের খাতায় নাম লেখান উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ দীনেশ শর্মাও। তিনি বলেন, ‘সংসদ বা রাষ্ট্রপতিকে কোনও নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।’