
রেকর্ড ভোটদান ও মহিলাদের বিপুল অংশগ্রহণ। এবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে চমকপ্রদ পরিসংখ্যান উঠে এসেছিল। স্বাধীনতার পর বিহারে সবচেয়ে বেশি হারে ভোটদান তো হয়েছেই, তার চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায় মহিলাদের ভোটদানের হার। যা একলাফে ১২% বেড়ে যায় বিহারে। পুরুষদের তুলনায় ৯% ভোট বেশি দিয়েছেন বিহারের মহিলারা। আর সেই অঙ্কেই সমস্ত হিসেব ওলোট-পালোট হয়ে গেল রাজ্যে।
মোক্ষম চাল
ভোটের আগে ঘোষণা করেছিলেন, বিহারের বাসিন্দা এমন মহিলা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য রাজ্য সরকারের সমস্ত ধরনের পদে থাকবে ৩৫ শতাংশ সংরক্ষণ। আর মোক্ষম চাল ছিল, বিহারের ১ কোটি ২১ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১০ হাজার টাকার অনুদানের ঘোষণা। সেটিই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াল বিহারের ভোটে। ভোট চুরি, SIR, জাতপাত, জঙ্গলরাজ, দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলি ভিড়ে মহিলা ভোটই বাজিমাত করল। মহিলাদের রেকর্ড ভোটদান এবং তার অধিকাংশটাই শাসক জোটের পক্ষে যাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মমতার পথেই নীতীশ
উল্লেখ্য, মহিলা ভোট বাংলাতে ২০২১ সালের পর থেকেই বড় ফ্যাক্টর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প শুরু করে ঘরে ঘরে মহিলাদের ৫০০ টাকা হাতে দেওয়া থেকে শুরু হয়েছিল সেই ট্রেন্ড। বর্তমানে যা বাংলার সীমান্ত পেরিয়ে ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্রে বাজিমাত করেছে। আর এবার বিহারেও খেলা ঘোরাল।
এক প্রকল্পের সুবাদে গোটা বাংলায় মহিলাদের মধ্যে শুধু ২ কোটির বেশি উপভোক্তা শ্রেণি তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা তাঁর পক্ষে জনসমর্থন মজবুত করেছিল রাজ্যে শাসকদলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও। বিহারের ক্ষেত্রেও 'পলটুরাম' নীতীশ কুমারের ইমেজ যেন কিছুটা ক্লিন হয়ে গিয়েছিল মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ঘোষণা করা এই ১০ হাজার টাকার প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিরা।
উল্লেখ্য, একটা সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপঢৌকনের রাজনীতিকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন। 'রেবড়ি' বলে খোঁচা দিয়েছিলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পে। অথচ একে একে একাধিক BJP শাসিত রাজ্য মহিলাদের সমর্থন আদায় করতে এই ধরনের প্রকল্প চালু করেছে ঠিক ভোটের আগেই। আর এবার বিহারে প্রথম দফায় ৭০ বক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে পাঠানোর উদ্বোধন হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়েই।
অঙ্কটা বুঝে নিন
NDA-র ভোট ৪৩ থেকে বেড়ে ৫০% হওয়া প্রায় নিশ্চিত। অর্থাৎ এই ৭% ভোটবৃদ্ধিতে মহিলাদের একটি বড় অংশের ভোটার রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে মহিলাদের ভোটদানের হার ছিল যথাক্রমে ৫৯.৬৯% (২০২০), এবং ৬০.৪৮% (২০১৫)। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ভোট স্যুইংয়ের নেপথ্যে গেম চেঞ্জার হয়ে উঠেছে নীতীশের ঘোষণা করা মহিলাদের নগদ অর্থের প্রকল্পই।
বিহারের ভোটে টিম NDA-র ‘নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন’ ছিলেন নীতীশ কুমার। তিনি নিজে ভোটে লড়েননি। তবে তিনিই যে নেপথ্যের নায়ক, তা আর কারও বোঝার বাকি নেই। । ৭৪ বছরের এই নেতার শানিত মস্তিষ্ক বিহারে মহিলা ভোটারদের সমর্থন আদায় করে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। লালুপুত্র তেজস্বী যাদবের দাবি ছিল, নীতীশ আদতে বিজেপির কাটপুতুল। তবে ভোটের ফলাফল কার্যত প্রমাণ করে দিল, ‘টাইগার আভি জিন্দা হ্যায়’।