২৩ ডিসেম্বর, সোমবার থেকে শান্তিনিকেতনে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। তবে পৌষমেলা এবার 'আন্তর্জাতিক' নয়। নেপথ্যে বাংলাদেশের সমস্যা ৷ ওপার বাংলার কোনও স্টল এবার আসেনি পৌষমেলায় ৷ শুধু তাই নয় ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে চিড়ের রেশ ধরে নেপাল, ভুটান-সহ বেশ কয়েকটি দেশের স্টলও আসেনি এবারের মেলায়। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের পর ফের মহর্ষির শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পৌষমেলার আয়োজন করছে ৷ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শান্তিনিকেতনে এই প্রথম ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা, তবে তা আন্তর্জাতিক নয় ৷
শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, 'পৌষমেলা এবার আন্তর্জাতিক হতে পারল না ৷ যেহেতু ওপার বাংলায় একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ৷ ফলে বাংলাদেশের স্টল আসেনি। নেপাল, ভুটানের স্টলও আসেনি ৷ এতে খারাপ লাগা আছে ৷ কিন্তু, ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা হচ্ছে। মানুষজন উপভোগ করবে। আশাকরি আগামী বছর থেকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্টল আসবে। আমাদেরও ভালো লাগবে।'
১৮৪৩ সালে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্ম ধর্মে দিক্ষিত হয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই দিনটি স্মরণে রাখতে প্রতি বছর ৭ ই পৌষ শুরু হয়েছিল 'পৌষ উৎসব'। পরবর্তীতে, ১৮৯১ ব্রহ্ম মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ৷ এই বছর, অর্থাৎ ৭ ই পৌষ একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সাল থেকে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ডিড অনুযায়ী শুরু হয় পৌষ উৎসব ও পৌষমেলা ৷
শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে ঐতিহ্যবাহী এই পৌষমেলা শেষবার হয়েছিল৷ ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল মেলা ৷ তারপর বিশ্বভারতীর তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে নানা কারণে রাজ্য সরকারের সংঘাত চরমে পৌঁছয় ৷ ফলে ২০২১, ২২ ও ২৩ সালে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মেলার আয়োজন করেনি ৷ এই বছর গুলিতে বাংলা সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও রাজ্য সরকার মেলা করেছিল ৷ যদিও তা 'ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা' ছিল না ৷
এবার ফের শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পূর্বপল্লীর মাঠে যথারীতি পৌষমেলার আয়োজন করছে ৷ ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পৌষ উৎসব ও পৌষমেলা। চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। শেষ প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। ১৬০০ স্টল থাকছে পৌষমেলায়। কিন্তু, এবার পৌষমেলা 'ঐতিহ্যবাহী' হলেও 'আন্তর্জাতিক' নয়। এর নেপথ্যে বাংলাদেশ ইস্যু ৷ ওপার বাংলায় সনাতনী সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার-সহ চিন্ময়কৃষ্ণ স্বামীকে গ্রেপ্তারের আঁচ পড়ে ভারতেও। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে চিড়ও ধরে ৷ এই কারণে এবার পৌষমেলায় নেই একটিও বাংলাদেশের স্টল ৷
২০১৯ সালে শেষবার দুটি বাংলাদেশ স্টল এসেছিল পৌষমেলায় ৷ এছাড়া, আগে নেপাল, ভুটান থেকেও স্টল আসত ৷ কিন্তু, এবার আসেনি ৷ জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে চিড় ধরার কারণেই ভিন দেশ থেকে স্টল আসেনি ৷ তাই এই প্রথম 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা হচ্ছে। যদিও, তাতে আন্তর্জাতিক তকমা থাকলো না ৷ যা নিয়ে আক্ষেপ সকলেরই ৷ তবে ৪ বছর পর পৌষমেলা ফেরায় খুশি সকলেই ৷ পৌষমেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ভ্রমর ভাণ্ডারী বলেন, 'একটা দুঃখেরই খবর। যদি বিদেশ থেকে স্টল আসতো ভালো লাগতো ৷ নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ থেকে স্টল আসত৷ কিন্তু, এবার আসছে না ৷ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কোথাও একটা কিছু থেকে এটা হচ্ছে। বিশ্বকবি তো সবার ৷ তাঁর হাত ধরেই দুই বাংলার মেলবন্ধন। ২০১৯ সালের পর হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। তবে আশাকরি আগামীতে সব ঠিক হয়ে যাবে।'