ওড়িশার বালাসোর জেলা থেকে এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে, যা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ফকির মোহন কলেজের এক ছাত্রী কলেজ ক্যাম্পাসে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। জানা যাচ্ছে যে কলেজের একজন অধ্যাপক দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করার কারণেই সে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কলেজের বাইরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাতেও এই পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে, যেখানে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর মেয়েটিকে যন্ত্রণায় দৌড়াতে দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ
শনিবার দুপুরে এফএম কলেজ ক্যাম্পাসে এই ঘটনাটি ঘটে। ওই ছাত্রী ইন্টিগ্রেটেড বি.এড. প্রোগ্রামের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। কলেজের ইন্টিগ্রেটেড বি.এড. বিভাগের প্রধান সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। এই নির্যাতনের বিষয়ে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছিলেন ছাত্রী, কিন্তু তা নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শুনানি না হওয়ায় এই পদক্ষেপ
ওই ছাত্রী এর আগেও বেশ কয়েকবার কলেজ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। তিনি প্রতিবাদও করেছিলেন, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ছাত্রীটি কয়েকদিন ধরে কলেজ গেটে ধর্নায় বসে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনার সময় ছাত্রীটি কলেজের বাইরে একা এসেছিলেন। তার সঙ্গে কেরোসিনের একটি ক্যান ছিল। কিছুক্ষণ পর সে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনার ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, যেখানে ছাত্রীটিকে আগুনে পুড়ে এদিক-ওদিক দৌড়াতে দেখা যাচ্ছে। ছাত্রীটিকে বাঁচাতে অন্য একজন ছাত্রী দৌড়ে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ওই ছাত্রীও গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাদের দুজনকেই বালাসোর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের দুজনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ভুবনেশ্বরের এইমস-এ রেফার করা হয়।
অভিযুক্ত অধ্যাপক পুলিশ হেফাজতে
ছাত্র সংগঠনগুলি বলছে, যদি ছাত্রীটির অভিযোগ সময়মতো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা ত, তাহলে এত বড় ঘটনা ঘটত না। তারা প্রশ্ন তুলেছে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে এবং প্রশাসন কেন চুপ করে বসে আছে। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বলেশ্বর টাউন পুলিশ কলেজে পৌঁছায়। তারা উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করে এবং কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে। এর পর, পুলিশ অভিযুক্ত অধ্যাপক সমীর কুমার সাহুকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
অধ্যক্ষ ও অধ্যাপককে সাসপেন্ড করা হয়েছে
এই ঘটনার পর অভিযুক্ত অধ্যাপক সমীর কুমার সাহু এবং কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ঘোষকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত সমীরকে হেফাজতে নিয়েছে। এই বিষয়ে ওড়িশার বিজেপি সরকারের নীরবতা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ঘোষের বক্তব্য
এই ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, 'গত ৩০ তারিখে আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। আসলে, ঘটনাটি শুরু হয়েছিল মিড-সেমি পরীক্ষা দিয়ে। ক্লাস চলাকালীন অনুপস্থিত থাকা ছাত্রছাত্রীদের আমরা পরীক্ষায় বসতে দেই না। তাদের নোটিস দেওয়া হয় কিন্তু কয়েকদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকার পর তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। এই ঘটনায়ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবসময়ই এমন হয়ে আসছে। আমি অনুমতি দিয়েছিলাম যে যারা অনেক দিন অনুপস্থিত থাকবে তাদের ডিবোর্ড করা হবে এবং কয়েকদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকার পর অনুমতি দেওয়া হবে। অভিযোগকারিনী সহ আরও ৯ জন মেয়েকে ডিবোর্ড করা হয় এবং নোটিস দেওয়া হয়। যেদিন এই ঘটনাটি ঘটেছিল, সেদিন প্রায় ৫/৬ জন মেয়েকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।' তিনি আরও যোগ করেন, 'এই মেয়েটি আবার ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করে, তাই তাকে আবার ক্লাসে পরীক্ষা দিতে বাধা দেওয়া হয়। এরপর মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় তার বন্ধুদের অনেক কিছু বলে। এরপর ৩০ তারিখে কিছু ছেলে আমার কাছে আসে। সেদিন তারা আমাকে অনেক কিছু বলে। তারা আমাকে বলে যে অধ্যাপক তাদের মানসিকভাবে হয়রানি করছেন। এর সঙ্গে, একজন মেয়ে আমাকে বলে যে অধ্যাপক তার সঙ্গে বাগানের কাছে দেখা করেছিলেন এবং তিনি মেয়েটির কাছ থেকে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে যদি সে এটা করে তবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।'
অধ্যক্ষের সঙ্গে অভিযোগকারিনীর তর্ক হয়েছিল
এই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে ৩ জন সিনিয়র অভ্যাপিকা ছিলেন। তাদের সঙ্গে নন-গেজেটেড অফিসার, কিছু ছাত্র প্রতিনিধি এবং কলেজের বাইরের প্রতিনিধিরাও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কমিটি ১৫ দিন সময় চেয়েছিল কিন্তু ৭ দিনের মধ্যে বিভিন্ন অধ্যাপক এবং ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়। রিপোর্টটি ২ দিন আগে অধ্যক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
অধ্যক্ষের দাবি ইতিমধ্যে কিছু ছাত্র আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলতে শুরু করে। আমি বলেছিলাম যে রিপোর্ট দেখার পর, সাবধানে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আজ যখন অভিযোগকারিনী ছাত্রীটি আমার কাছে আসে, আমি তাকে বুঝিয়ে বলি যে আমরা অবশ্যই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। আমি প্রায় ২০ মিনিট ধরে ছাত্রীটিকে বুঝিয়ে বলি, হঠাৎ সে সমীরের বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে তর্ক শুরু করে। সে আমাকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং বলে যে সে আর অপেক্ষা করতে পারবে না। এই বলে সে চলে যায়।