জম্মু কাশ্মীরে পহেলগাঁও আক্রমণে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) কমান্ডার হাশিম মুসা নিহত। আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একজন সৈনিক ছিলেন তিনি। অবশেষে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। অপারেশন মহাদেবের সেই এনকাউন্টারের ছবি সামনে এসেছে। হাশিম মুসাকে কেবল পহেলগাঁও হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবেই শুধু নয়, এর আগে সোনামার্গ টানেল হামলার ক্ষেত্রেও মূল চক্রী ছিলেন। কীভাবে এই অভিযানটি সংঘটিত হয়েছিল, হাশিম মুসা কে ছিলেন এবং এই ঘটনা ভারতের নিরাপত্তার উপর কী প্রভাব ফেলবে।
কী কী অভিযোগ ছিল?
পহেলগাঁও হামলা (২২ এপ্রিল ২০২৫): জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও বৈসরান উপত্যকায় পাঁচজন সন্ত্রাসবাদী মিলে ২৬ জন পর্যটকের উপর হামলা চালায়। এই হামলায় M4 কার্বাইন এবং AK-47 ব্যবহার করা হয়েছিল। লস্করের একটি ফ্রন্ট, রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) প্রথমে দায় স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করে।
সোনামার্গ টানেল আক্রমণ (২০২৪): সোনামার্গের জেড-মোর টানেলের কাছে হামলায় সাতজন নিহত হন, যার মধ্যে ছয়জন শ্রমিক এবং একজন ডাক্তার ছিলেন। এই হামলার ক্ষেত্রেও উঠে আসে হাশিম মুসার নাম।
হাশিম মুসা কে?
হাশিম মুসা, যিনি সুলাইমান শাহ মুসা ফৌজি নামেও পরিচিত, লস্কর-ই-তৈয়বার একজন বিপজ্জনক কমান্ডার। মুসা পাকিস্তানের স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি) এর একজন প্যারা-কমান্ডো ছিলেন, যা একটি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সেনা ইউনিট। ২০২২ সালে, সে ভারতে অনুপ্রবেশ করে লস্করে যোগ দেয়। বেশ কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা করেছিল।
হামলার মূল পরিকল্পনাকারী: সে পহেলগাঁও আক্রমণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৫ এপ্রিল থেকে বৈসরান ভ্যালিতে ছিল এবং সাত দিন ধরে রেকি (গুপ্তচরবৃত্তি) করে।
সোনমার্গ বিস্ফোরণ: তিনি সোনামার্গ টানেল আক্রমণেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেখানে সাতজন নিহত হয়েছিল।
লুকানোর জায়গা: সে দাচিগাম এবং লিদওয়াসের জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। যেখান থেকে সে পাকিস্তানে পালানোর চেষ্টা করছিল। হাশিম মুসা বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গেও জড়িত ছিল (যেমন গান্দেরবাল এবং বারামুল্লায়)। তাই তাকে ধরা বা হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনী ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
অপারেশন মহাদেব এবং লিডওয়াস এনকাউন্টার
পহেলগাঁও হামলার ৯৬ দিন পর শুরু হওয়া অপারেশন মহাদেবের মাধ্যমে হাশিম মুসাকে হত্যা করতে সফল হয়েছিল। এই অভিযান কীভাবে সম্পন্ন হয়েছিল তা জেনে নিন...
প্রস্তুতি: সেনাবাহিনী ড্রোন, থার্মাল ইমেজিং এবং হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স (HUMINT) ব্যবহার করে হাশিমের অবস্থান ট্র্যাক করে ফেলে।লিডওয়াসের জঙ্গলে তার উপস্থিতির খবর পাওয়া যায়।
এনকাউন্টার: ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই সকালে সেনাবাহিনী এলাকাটি ঘিরে ফেলে। হাসিম এবং তার দুই সঙ্গী গুলি চালাতে শুরু করে কিন্তু ৬ ঘণ্টার এনকাউন্টারের পর, তিনজনই নিহত হয়।
অস্ত্র ও প্রমাণ: এনকাউন্টারের পর, সেখান থেকে AK-47, গ্রেনেড এবং IED (বোমা) উদ্ধার করা হয়েছে। মুসার কাছে একটি পাকিস্তানি পাসপোর্ট এবং স্যাটেলাইট ফোনও পাওয়া গেছে, যা ISI-এর সঙ্গে তার যোগাযোগের প্রমাণ।
ছবি: লিডওয়াস এনকাউন্টারের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে নিহত সন্ত্রাসীদের মৃতদেহ এবং অস্ত্র দেখানো হয়েছে। এই ছবিগুলি সেনাবাহিনীর সাফল্যের প্রমাণ।