পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে মিসাইল হামলা চালাল ভারত। বুধবার ভোররাতে এই ‘ফোকাসড অ্যান্ড প্রিসাইজ’ হামলায় একের পর এক ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।
যে তিনটি বড় জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে এই হামলা চালানো হয়েছে, তারা হল—জইশ-ই-মহম্মদ (JeM), লস্কর-ই-তইবা (LeT) এবং হিজবুল মুজাহিদিন। প্রতিটি ঘাঁটি আগে থেকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW) দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্ত জঙ্গি ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিল।
কোথায় কোথায় আঘাত?
সবচেয়ে বড় হামলাটি হয়েছে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে, যা আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে। এখানেই রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতর। মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর থেকে এই জায়গাটি ভারতের নজরে ছিল। এখানকার সুবহান আল্লাহ মসজিদও লক্ষ্যবস্তুতে ছিল। এই মসজিদেই ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার ছক কষা হয়েছিল এবং জইশ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।
আরেকটি বড় হামলা হয়েছে মুরিদকেতে, যা সাম্বার ঠিক উলটো দিকে, সীমানা থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে। এখানে লস্কর-ই-তইবার একটি ক্যাম্প ছিল, যা ২৬/১১ মুম্বই হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
PoK-র ভিতরেও একাধিক হামলা হয়েছে। তাংধার সেক্টরে লস্করের সাওয়াই ক্যাম্পে আঘাত হানা হয়। এই ঘাঁটি থেকে বহু বড় মাপের হামলার ছক করা হয়েছিল, যেমন সোনমার্গ (অক্টোবর ২০২৪), গুলমার্গ (অক্টোবর ২০২৪) এবং সাম্প্রতিক পাহেলগাম হামলা।
পুঞ্চ-রাজৌরির গুলপুরেও হামলা হয়। এই ঘাঁটি ২০২৩ সালে পুঞ্চের সেনা কনভয় হামলা ও ২০২৪ সালে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বাসে হামলার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে।
আর কোন কোন ক্যাম্পে আঘাত?
বিলাল ক্যাম্প: জইশ-ই-মহম্মদের লঞ্চপ্যাড।
কোটলি ক্যাম্প: রাজৌরির উলটো দিকে, লস্করের আত্মঘাতী জঙ্গি ক্যাম্প।
বারনালা ক্যাম্প: ১০ কিমি দূরে, রাজৌরি সীমান্তের কাছাকাছি।
সারজাল ক্যাম্প: সাম্বা-কাথুয়ার উলটো দিকে, জইশ ক্যাম্প।
মেহমুণা ক্যাম্প: সিয়ালকোটের কাছে হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি।
ভারতের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে?
রাত ১.৪৪ মিনিটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই সামরিক অভিযান ছিল ‘ফোকাসড, মেজার্ড এবং নন-এস্কেলেটরি’, অর্থাৎ অত্যন্ত লক্ষ্যভিত্তিক এবং সীমিত পরিসরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনা সূত্রের খবর, সমস্ত লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে হামলা করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে এই পুরো অভিযান পর্যবেক্ষণ করেছেন।
কেন এই হামলা?
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে যে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়, তাতে ভারতীয় সেনার কয়েকজন জওয়ান শহিদ হন। তারই জবাবে এই অভিযান। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলার মাধ্যমে ভারত সারা বিশ্বকে আবারও বুঝিয়ে দিল যে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা কোনও রকম আপস করবে না।