বাল্যবিবাহ রুখতে কড়া দমন নীতি শুরু করেছে অসম সরকার। রাজ্যজুড়ে চলছে গ্রেফতারি অভিযান। ইতিমধ্যে নাবালিকাদের বিয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২ হাজারের বেশি অভিযুক্ত গ্রেপ্তার করেছে অসম পুলিশ। কিন্তু সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন মহিলারাই। বাবার গ্রেপ্তারি এড়াতে ইতিমধ্যে আত্মঘাতী হয়েছেন এক মহিলা। অন্যদিকে বাবা ও স্বামীকে গ্রেপ্তার করলে আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন আরেক মহিলা। ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে প্রতিবাদ করছেন তাঁরা। তবে কোনও নরম মনোভাব দেখাতে রাজি নয় অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। অভিযান চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার তামারহা থানার সামনে জড়ো হওয়া মহিলাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করার পরে ধুবরি জেলায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মহিলারা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষিত রাজ্যব্যাপী ক্র্যাকডাউন শুক্রবার শুরু হয়েছিল এবং আগামী ছদিন চলবে। এখন পর্যন্ত ২,২৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুধু পুরুষদের কেন গ্রেফতার কেন? আমরা বা আমাদের সন্তানরা কীভাবে বাঁচব? আমাদের আয়ের কোনো উপায় নেই, মাজুলি জেলার ৫৫ বছর বয়সী নিরোদা ডলি সংবাদ মাধ্যমকে একথা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারপেটা জেলার এক মহিলার বক্তব্য, তাঁর ছেলে নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। সে ভুল করেছে। কিন্তু আমার স্বামীকে কেন গ্রেপ্তার করবে?
মরিগাঁওয়ের মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার পুত্রবধূর যখন বিয়ে হয় তখন, তার বয়স ছিল ১৭। এখন তিনি ১৯ এবং পাঁচ মাসের গর্ভবতী। কে তার দেখাশোনা করবে?
এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৪ হাজার ৪টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে ৮,০০০ আসামির তালিকা রয়েছে এবং অভিযান চলবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী ৫১ জন পুরাহিত ও কাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত, বিশ্বনাথ জেলায় সর্বোচ্চ ১৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধুবড়িতে ১২৬, বক্সায় ১২০, বারপেটাতে ১১৪ এবং কোকরাঝাড়ে ৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অসমের মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদের যারা বিয়ে করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা (পকসো) আইনের অধীনে মামলা করা হবে। এবং বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা আইন ২০০৬ এর অধীনে মামলা নথিভুক্ত করা হবে।
সিএম হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন যে তিনি পুলিশকে মহিলাদের উপর অমার্জনীয় এবং জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মনোভাব নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অসমে প্রসুতি মৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর উচ্চ হার রয়েছে। বাল্যবিবাহই যার প্রধান কারণ। রাজ্যেটিতে গড় ৩১ শতাংশ বিয়েই অল্প বয়সে।