কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন পাকিস্তানি। আর সেই পাকিস্তান এই হামলার ঘটনার নিন্দা করল। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক এক বলেছে, 'অনন্তনাগ জেলায় হামলায় পর্যটকদের প্রাণহানির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নিহতদের নিকটাত্মীয়দের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।'
ইতিমধ্যেই পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার স্থানীয় শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলার মূল চক্রী লস্কর নেতা সইফুল্লাহ কাসুরি ও তার দুই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-ভিত্তিক সঙ্গী। হামলার কয়েকদিন আগেই তারা উপত্যকায় ঢোকে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ৫ থেকে ৬ জন জঙ্গি এই হামলায় জড়িত।
হামলার পরেই মঙ্গলবার বিকেল থেকেই এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। জঙ্গিদের খোঁজে চলছে চিরুণি তল্লাশি। হেলিকপ্টার, ড্রোন ব্যবহার করছে সেনা। এনআইএ দল শ্রীনগরে পৌঁছেছে। ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দলও উপস্থিত রয়েছে। সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ, এসওজি, জম্মু পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। মুঘল রোডে সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পহেলগামে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান শেষ হওয়ার পর, এনআইএ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিহতদের পরিবারের অনেকেই জানিয়েছেন যে ধর্ম জেনে বেছে বেছে গুলি করেছে জঙ্গিরা। হিন্দু ধর্ম জানতে পারার পরেই এতজন মানুষকে গুলি করা হয়েছে। নিহত এক যুবকের স্ত্রী জানিয়েছেন, পর্যটকদের নাম জিজ্ঞাসা করে, তাদের ধর্ম পরিচয় যাচাই করে গুলি করা হয়েছে। হামলার প্রাথমিক তদন্তে আরও কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। জানা যাচ্ছে, এই হামলায় পাকিস্তানি ও স্থানীয় কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদীরা যৌথভাবে চালিয়েছে। এক জঙ্গির প্রথম ছবি সামনে এসেছে। এই ছবিটি ঘটনাস্থলের, যেখানে এক জঙ্গিকে হাতে বন্দুক ধরে আছে। যদিও ছবিতে জঙ্গির মুখ দেখা যাচ্ছে না। জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা হেলমেট লাগানো ক্যামেরা পরে ছিল। যাতে তারা ঘটনার পুরো দৃশ্য ভিডিও করতে পারে। তিনজন জঙ্গি পর্যটকদের এক জায়গায় জড়ো করে। এরপর পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা করা হয়। তারপর সবার পরিচয় জানে জঙ্গিরা। কিছু লোককে দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল, আবার কিছু লোককে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। বেশিরভাগ লোক অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর যে তথ্যটি জানা যাচ্ছে তা হল উদ্ধারকাজে সময় লাগবে এবং হতাহতের সংখ্যা সর্বাধিক হবে জেনেই ইচ্ছাকৃতভাবে পহেলগাঁওয়ের বাইসারান ভ্যালিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এটি একটি বিখ্যাত পর্যটন স্পট, যা 'মিনি সুইজারল্যান্ড' নামে পরিচিত। বাইসারানকে আক্রমণের জন্য বেছে নিয়েছিল কারণ এই এলাকায় কোনও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ছিল না। জঙ্গিরা লুকোনোর জন্য ঘন জঙ্গলে আস্তানা তৈরি করেছিল। স্থানীয় জঙ্গিদের সাহায্যে তারা সম্ভবত এখন তাদের অবস্থানও পরিবর্তন করে ফেলেছে। এলাকায় সক্রিয় মোবাইল নম্বরগুলির সম্পূর্ণ বিবরণ জানতে পুলিশ টেলিকম কোম্পানিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পাল্টা হামলার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঘন বন এবং পাহাড়ে জঙ্গিদের খুঁজে বের করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। উন্নত রাডার ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি এমন একটি রাডার, যার মাধ্যমে ঘন বনে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধি সহজেই শনাক্ত করা যায়।