পাহাড়ি উপত্যকার সৌন্দর্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্র এখন ধীরে ধীরে সামনে আসছে। দেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসারন উপত্যকায় ২২ এপ্রিল ২৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যাকারী জঙ্গিদের পিছনে রহস্যের স্তর খুলতে শুরু করেছে। তদন্তে জানা গিয়েছে যে পাকিস্তানি জঙ্গিরা ১৫ এপ্রিল এখানে এসেছিল এবং সাত দিন ধরে রেইকি করেছিল।
আল্ট্রা স্টেট কমিউনিকেশন ব্যবহার করে এখনও পর্যন্ত তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং উচ্চ প্রযুক্তির সন্ত্রাসবাদী হামলার দিকে ইঙ্গিত করছে। তদন্তকারী সংস্থা জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) ডিজি বৃহস্পতিবার নিজেই বৈসারন ভ্যালিতে গিয়েছেন। এনআইএ-র তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে যে, সেখানে থাকা তিন জঙ্গি আল্ট্রা স্টেট কমিউনিকেশন নামে একটি বিশেষ কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করছিল, যা একটি অত্যাধুনিক এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই সিস্টেমটি খুব সীমিত সিগন্যালে কাজ করে এবং অবস্থান ট্রেসিংকেও বিভ্রান্ত করে। এজেন্সিগুলি ওই এলাকায় দুটি সন্দেহজনক সংকেত শনাক্ত করেছে। মনে করা হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদীরা এগুলোর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। এছাড়াও, বলা হচ্ছে যে জঙ্গিরা তিনটি জায়গায় রেইকি করেছিল যেখানে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় থাকে। একজন পহেলগাঁওয়ের বিনোদন পার্কের রেইকি করেছিল। এখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে রেইকি স্থগিত করা হয়েছিল। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা 3D ম্যাপিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনাস্থলের একটি ভার্চুয়াল মানচিত্রও তৈরি করেছে।
এই এলাকাটি পাহাড়ি এবং অনেক জায়গায় সিসিটিভি নেটওয়ার্ক নেই, যার ফলে প্রাথমিকভাবে তদন্তে অসুবিধা হয়। কিন্তু ঘটনার কিছু প্রত্যক্ষদর্শী এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বক্তব্য তদন্তে অনেক সাহায্য করেছে। এনআইএ-র প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে যে স্থানীয় সাহায্যকারীরাও এই পুরো অভিযানে জড়িত থাকতে পারে, তাদের খোঁজে এখন তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। শীঘ্রই তাদের ধরা হবে। বৈসারন ভ্যালি এখন সম্পূর্ণরূপে সিআরপিএফ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এখানে বর্তমানে সাধারণ নাগরিকদের চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং এনআইএ-র ডিজি নিজেই সেখানকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।
এটিও সন্ত্রাসবাদীদের পরিকল্পনা ছিল
সূত্রের খবর, ২২ এপ্রিল এক জঙ্গি এগজিট গেট দিয়ে পার্কে প্রবেশ করে এবং নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। আসলে এটি ছিল পরিকল্পনার অংশ। যখন এগজিট গেটে গুলি চালানো হচ্ছিল, তখন পর্যটকরা সবাই পালানোর জন্য এন্ট্রি গেটের দিকে যেতে শুরু করে এবং সেখানে ২ জন জঙ্গি ছিল। এরপর, সবাই একত্রিত হয়। জঙ্গিরা প্রথমে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা হতে বলে। কিন্তু লোকজন তাতে কান দেয় না। এরপর জঙ্গিরা হিন্দু ও মুসলিমদের আলাদা হতে বলে। কিন্তু মানুষজন সেটাও করেনি। এরপর জঙ্গিরা তাদের কলমা পাঠ করে বলে এবং একে একে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনাস্থলে পাওয়া কার্তুজের খোসা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে এনআইএ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তদন্তে জানা গিয়েছে যে মাত্র ৩ জন জঙ্গি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।