এভাবেও মেরে ফেলা যায়! কাশ্মীরের মনোরম পহেলগাঁওয়ের বৈসরান উপত্যকা—যেখানে স্বর্গের সৌন্দর্য যেন পৃথিবীতে ধরা পড়ে—সেই শান্তির ঠিকানাই এখন কান্না ও রক্তের উপত্যকা। মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল, সেখানে ঘটে গেল এমন এক বর্বর জঙ্গি হামলা, যা শুধুমাত্র প্রাণ কাড়েনি, বরং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার উপর বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এই হামলার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরা একে ইজরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের জঙ্গি হামলার সঙ্গে তুলনা করছেন। দুই ক্ষেত্রেই সাধারণ নাগরিকদের টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। হামাস যেমন রেইম ফেস্টিভ্যালে ইজরায়েলি নাগরিকদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করেছিল, তেমনি টিআরএফ-এর জঙ্গিরাও ম্যাগি খেতে থাকা পর্যটকদের কাছে গিয়ে জানতে চায়—তুমি কি মুসলিম? যদি না হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে চালানো হয় গুলি।
সূত্রের দাবি, জঙ্গিরা ক্যামেরা লাগিয়ে পুরো ঘটনা ভিডিও করছিল। সেনার পোশাক পরিহিত এই আততায়ীরা ইতিমধ্যে বৈসরানের ভূখণ্ড ‘রেকি’ করেছিল। জম্মু-কাশ্মীরে তখন পর্যটনের ঋতু। পরিবার, নবদম্পতি, শিশুসহ বহু মানুষ ছুটি কাটাতে এসেছিলেন শান্ত পহেলগাঁওয়ে। শান্ত পরিবেশ, কম নিরাপত্তা—এই সুযোগকেই কাজে লাগায় জঙ্গিরা।
হামলায় নিহত হয়েছেন ২৮ জন নিরীহ মানুষ। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত, এই ধরনের আক্রমণ কেবল নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, বরং একটি বড় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশল বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
ইসরায়েলের ঘটনায় হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় শুরু হয়েছিল ‘অপারেশন আয়রন সোর্ডস’। হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার বিনিময়ে মৃত্যু হয় ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে—ভারত কি এবার কঠোর পদক্ষেপ নেবে? টিআরএফ-এর মতো সংগঠনকে নির্মূল করতে কি কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে বৃহৎ উদ্যোগ নেওয়া হবে?
এই হামলা কেবলমাত্র একেকটি পরিবারের নয়, গোটা জাতির বুক চিরে দিয়ে গেছে। এবং এটাই সন্ত্রাসবাদের চরম লক্ষ্য—ভয়, বিভাজন এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করা। কিন্তু ইতিহাস বলে, ভারতে এই হামলাগুলি দীর্ঘমেয়াদে শান্তির অগ্রগতিকে থামাতে পারেনি। এবারও দেশবাসী প্রত্যাশা করে, দোষীদের কঠোরতম শাস্তি এবং জম্মু-কাশ্মীরে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে আরও একধাপ এগোবে ভারত।