কাশ্মীরে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা ধর্ম চিহ্নিত করে পর্যটক খুন করেছে। অসমের এক বাঙালি পর্যটক জঙ্গিদের ওই টার্গেট ধরে ফেলে হত্যালীলার সময় স্রেফ বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেলেন। অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবাশিস ভট্টাচার্য এক জঙ্গির সামনে কালমা উচ্চারণ করতে শুরু করেন। সেই শুনেই AK47-ধারী ওই জঙ্গি দেবাশিসকে ছেড়ে দেন। হত্যা করেনি।
পহেলগাঁওয়ের হৃদয়বিদারক জঙ্গি হামলায় যখন পর্যটকরা আতঙ্কে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই চালাচ্ছেন, সেই সময় এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দেবাশিস ভট্টাচার্য। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়ে সেই মর্মান্তিক মুহূর্তে কীভাবে তিনি জঙ্গির মুখোমুখি হয়ে বেঁচে গেলেন, সেই অভিজ্ঞতা তিনি নিজেই শেয়ার করেছেন।
'আমি নিজেও বুঝিনি কীভাবে কালমা পড়ে ফেলেছিলাম…'
ঘটনার সময় একটি গাছের নীচে ছিলেন দেবাশিস ভট্টাচার্য ও তাঁর পরিবার। তখনই চারদিক থেকে ‘কালেমা’ পড়ার আওয়াজ ভেসে আসে। তিনি জানান, 'আমি শুনছিলাম চারপাশে মানুষজন কালমা পড়ছে। তখন আমি নিজেও না ভেবে পড়তে শুরু করি।' ঠিক তখনই এক জঙ্গি সামনে এসে দাঁড়ায়। ভট্টাচার্য বলেন, 'সে আমাকে জিগ্গেস করল, ‘তুমি কী বলছো?’ আমি তখনও বারবার বলতে থাকি— ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে চলে যায়।'
এই ঘটনাই হয়তো তাঁর প্রাণ বাঁচায়। তিনি জানান, জঙ্গি তাঁকে সরাসরি কিছু বলেনি, কিন্তু চারপাশে সবাই যখন ধর্মীয় বচন পাঠ করছিল, তখন তিনিও যেন আবেগবশত তাতে যোগ দেন। সেই মুহূর্তে আর কিছু ভাবার সময় ছিল না।
অসম সরকার পাশে দাঁড়িয়েছে
ঘটনার পরই অসম সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তরফে এক্স-এ জানানো হয়, 'দেবাশিস ভট্টাচার্য ও তাঁর পরিবারের নিরাপদে অসমে ফেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভারত সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে যাতে দ্রুত তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।' ভট্টাচার্য নিজে জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর পরিবার সম্পূর্ণ নিরাপদ, এবং তাঁরা ২৬ এপ্রিলের মধ্যে শ্রীনগরে পৌঁছবেন। সেখান থেকে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা চলছে।
২৮ জনের প্রাণ গেল এই হামলায়
মঙ্গলবারের পহেলগাঁও হামলায় ২৮ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শোক আর ক্ষোভ। জঙ্গিগোষ্ঠী ‘দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)’, যা লস্কর-ই-তৈবার একটি ছায়া সংগঠন, তারা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই জঘন্য হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমাচ্ছে। কয়েকটি কৌশলগত প্রকল্প, যেমন ইন্দাস জল চুক্তি ও সার্ক ভিসা ছাড় পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সাসপেন্ড করে দেয়।
আতঙ্ক ছড়ালেও সাহস দেখালেন অনেকে