লোকসভায় সম্মুখ সমরে বাংলার দুই মহিলা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও মহুয়া মৈত্র। মণিপুর নিয়ে বলতে গিয়ে বাংলার নারী নির্যাতনের ঘটনা টানলেন হুগলির বিজেপি সাংসদ। তার পাল্টা কৃষ্ণনগরের সাংসদ দাবি করলেন, মণিপুরের ঘটনার সঙ্গে অন্য জায়গার কোনও তুলনা হতে পারে না।
প্রসঙ্গ অনাস্থা ও বিরোধী জোট
বৃহস্পতিবার তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন,'এটা শুধুই অনাস্থা প্রস্তাব নয়। আমরা জানি আমাদের কাছে সংখ্যা নেই। আমরা এই সরকারকে ফেলতে চাই। আমরা চাইছি গণতান্ত্রিকভাবে যেন আমাদের মনের কথা বলতে পারি।'
মহুয়াকে লকেটের জবাব,'বিরোধীরা পরস্পরকে বিশ্বাস করে না। এরা নিজেদের জন্য অনাস্থা এনেছে। আমাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা নয় এটা। সুকুমার রায় বলেছিলেন, হযবরল। এটাও হযবরল জোট। বাংলায় কুস্তি করে। আজ এখানে তৃণমূলকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। আমি অধীরদাকে জিজ্ঞাসা করছি, ওখানে আপনাদের কর্মীদের মারা হয়েছে। আর এখানে পরস্পরকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন। এটা গণতন্ত্রের দুর্ভাগ্য।'
প্রসঙ্গ মণিপুর
মহুয়া বলেন,'মণিপুর ইস্যুতে সরকারের নীরবতার বিরোধিতা করছি। বলা হচ্ছে, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় ও বাংলার ধর্ষণ নিয়ে কেন আলোচনা হয়নি? মণিপুরের বিষয়টি ভিন্ন। মণিপুরে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষের অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। নির্যাতিতারা সুবিচার পাচ্ছেন না। লড়াই চলছে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। তিন মাসে দেড়শোর বেশি মানুষ নিহত। থানা থেকে হাজার হাজার অস্ত্র ও লাখ লাখ গুলি লুট হয়েছে।'
লকেট বলেন,'বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসায় মহিলাদের উপর অত্যাচার করেছে, ওরা গণতন্ত্রের কথা বলছে? ৩০ শতাংশের রাজনীতি চলে বাংলায়। দুর্গাপুজোর বিসর্জন ও সরস্বতী পুজো বন্ধ করা হয়েছে। ৫৯ জন কর্মী মারা গিয়েছে এই পঞ্চায়েত ভোটে। ২০২১১ সাল থেকে সব জায়গায় মহিলাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার জন্য মণিপুরকে হাতিয়ার করেছে। রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে নীরব বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে মুখ খুলছে। এদের লজ্জা হওয়া উচিত। হিম্মত থাকলে বাংলা, রাজস্থান নিয়ে বলুন। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। মালদায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়েছে। টিম তো দূরে পঞ্চায়েত সদস্যকেও পাঠাননি। মুখ্যমন্ত্রী মৌনব্রত। ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গের জিপিএস লোকেশন হারিয়ে ফেলেছে বিরোধীরা।'
প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা
মহুয়া মৈত্র বলেন,'আমাদের বলা হচ্ছে,'তুম অভি চুপ রাহো'। গণতন্ত্রে প্রশ্ন করতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী একজন রাজ্যপালকে 'চুপ' করতে বলেছেন। এই সংসদে নির্বাচিত সাংসদ হিসেবে আমাদের নিয়মিত 'চুপ' থাকতে বলা হয়। মণিপুর নিয়ে নীরবতা ভাঙতেই এই প্রস্তাব। প্রধানমন্ত্রী মোদী আমাদের কথা শুনবেন না, শেষ দিনে এসে ভাষণ দেবেন। আমি জানি না এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সংসদে আসতে অস্বীকার করেছেন বা তিনি মণিপুরেও যেতে অস্বীকার করেছেন।'
লকেটের জবাব,'আজ প্রধানমন্ত্রী জবাব দেবেন। তবে বাংলায় যে খেলা হবে-র পরিস্থিতি, তার জবাব কি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা। আমি বন্দে মাতরমের ভূমি থেকে এসেছি। সৌগত রায়ও একই জায়গার। কাল গুজরাত দাঙ্গার কথা বলছিলেন। ওঁর স্বাস্থ্যের কুশল কামনা করি। বাংলার দাঙ্গার তালিকা দিলে ওঁর রক্তচাপ বেড়ে যাবে। সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন, তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। আজ বাংলায় বলা হচ্ছে,আর কত লাশ চাই, আর কত রক্ত চাই। আর কত করতে চাও বাঙালির সর্বনাশ। একুশে জুলাই শহিদ দিবস। বিজেপির লোকেদের শহিদ করার বার্তা দেয়।'