
‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর উপলক্ষে সোমবার লোকসভায় আলোচনা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেড়শো বছর পরেও বন্দে মাতরম দেশের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্র বলেন, এই গান শক্তির মন্ত্র দিয়েছিল। একসময় স্বাধীনতা সংগ্রামে গোটা দেশের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল বন্দে মাতরম। বিপ্লবীরা এই গান গেয়েই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে 'বঙ্কিমদা' বলে সম্বোধন
কিন্তু বন্দে মাতরম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তাল কাটলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বন্দে মাতরম গানটির রচয়িতা, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে সংসদে বলতে গিয়ে বারংবার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে 'বঙ্কিমদা' বলে উল্লেখ করতে থাকেন মোদী। তখনই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
দমদমের সাংসদ নরেন্দ্র মোদীকে প্রশ্ন করেন, "আপনি বার বার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বঙ্কিমদা বলছেন কেন? অন্তত বাবু বলুন।" আপত্তি শুনে থমকে যান প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই ভুল সংশোধন করে তিনি বলেন, "আচ্ছা, আপনার ভাবাবেগে আঘাত লাগার জন্য দুঃখিত। আমি বঙ্কিমবাবু বলছি।" এরপরে সৌগতকেই 'দাদা' বলে সম্বোধন করে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,"আপনাকে তো দাদা বলে সম্বোধন করতেই পারি।"
বন্দেমাতরমের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করার সুযোগ
দেশের জাতীয় গান প্রসঙ্গে মোদী বলেন, “বন্দে মাতরম বহু প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে আসছে। আগামীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।” তিনি জানান, সরকার চায় বন্দে মাতরমের মাহাত্ম্যকে পুনরুদ্ধার করতে। এরপর তিনি বলেন, "যখন বন্দে মাতরম ৫০ বছর পূর্ণ করেছিল, তখন দেশ ব্রিটিশ শাসনে ছিল। যখন বন্দে মাতরম ১০০ বছর পূর্ণ করে তখন ভারত জরুরি অবস্থার কবলে ছিল। কিন্তু যখন আজ ১৫০ বছর পূরণ হচ্ছে, তখন আমাদের সামনে সেই গর্ব পুনরুদ্ধার করার সুযোগ রয়েছে।"
পাশাপাশি মোদী বলেন, 'এই মন্ত্র দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে প্রেরণা দিয়েছিল, ত্যাগ এবং তপস্যার দিশা নির্দেশ করেছিল, সেই বন্দে মাতরমের স্মরণ করা আমাদের কাছে অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়।'
বন্দে মাতরমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল!
প্রধানমন্ত্রী সংসদে অভিযোগ করেন, বন্দে মাতরমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'মহাত্মা গান্ধীর পবিত্র ভাবনাকে কলুষিত করা হয়েছিল। আগামী প্রজন্মকে জানানো উচিত, বন্দে মাতরমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল।' এরপরই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, 'বন্দে মাতরমের প্রতি মুসলিম লিগের বিরোধী রাজনীতি বাড়ছিল। মহম্মদ আলি জিন্নাহ লখনউ থেকে ১৫ অক্টোবর, ১৯৩৭ স্লোগানিং করেছিলেন বন্দে মাতরমের বিরুদ্ধে। নিজের আসন নড়বড় হতে দেখছিলেন জওহরলাল নেহরু। মুসলিম লিগের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতে হত, কিন্তু উল্টো করলেন তিনি। জিন্নাহের বিরোধিতার ৫ দিন পর ২০ অক্টোবর নেহরু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে চিঠি লেখেন। জিন্নাহর সঙ্গে সহমত পোষণ করে তিনি বলেন, আনন্দমঠে বন্দে মাতরমের অংশ মুসলিমদের চটাতে পারে।'
মোদীর সংযোজন, "বঙ্কিমবাবুর বাংলা, বঙ্কিমবাবুর কলকাতায় বসেই বন্দে মাতরমের কাটাছেঁড়া হল। দেশের মানুষ বিরোধিতা করল তা সত্ত্বেও বন্দে মারতম নিয়ে নেহরুজি সমঝোতা করলেন। বন্দে মাতরমের টুকরো করা হল। কংগ্রেস মুসলিম লিগের সামনে মাথা নত করে দিল। পক্ষপাতিত্বের রাজনীতির একটি বড় নমুনা ছিল সেটি। সে কারণে কংগ্রেসকে একদিন ভারত ভাগের জন্যও মাথা নত করতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত কংগ্রেসের নীতি এখনও একই রয়েছে।"