
'বন্দে মাতরম' গানটিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল, সেখানেই বিভাজনের বীজ পোঁতা হয়। এমনই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার দেশের জাতীয় গীত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'বন্দে মাতরম'-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভাষণ দেন তিনি। গানটির মাহাত্ম এবং অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করার পাশাপাশিই ১৯৩৭ সালের একটি কাহিনি তুলে ধরেন তিনি।
কী বললেন মোদী?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, 'স্বাধীনতার লড়াইয়ে বন্দে মাতরম গানটি গোটা দেশকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরমের আত্মার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বন্দে মাতরমকে ভেঙে টুকরো করা হয়েছিল। বন্দে মাতরমের এই বিভাজনেই দেশের বিভাজনের বীজ বপন করা হয়েছিল। রাষ্ট্র নির্মাণের এই মহামন্ত্রের সঙ্গে এই অন্যায় কেন হয়েছিল, তা আজকের প্রজন্মের জানা প্রয়োজন। দেশের জন্য সেটাই আজও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।'
১৯৩৭ সালে কী হয়েছিল?
BJP-র জাতীয় মুখপাত্র সিআর কেসবন এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে অভিযোগ করেন, 'কংগ্রেসের ফইজপুর অধিবেশনে বন্দে মাতরমের কেবলমাত্র একটি অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মা দুর্গাকে নিয়ে লেখা অংশগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেস ঐতিহাসিক পাপ করেছিল। এই গানকে ধর্মের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে জঘন্য অপরাধ করেছিল তারা।' ১৯৩৭ সালে সুভাষচন্দ্র বসুকে লেখা নেহরুর একটি চিঠির কথা উল্লেখ করে BJP-র অভিযোগ, 'মুসলিমদের রাগাতেই এই গান লেখা হয়েছিল বলে ওই চিঠিতে লিখেছিলেন নেহরু। এটা ঐতিহাসিক অপরাধ। গানটির জাতীয় গুরুত্ব নষ্ট করেছেন তিনি।' BJP মুখপাত্রের আরও দাবি, '১৯৩৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর লেখা ওই চিঠি নেহরু বলেছিলেন, কেউ যদি মনে করেন বন্দে মাতরমের কোনও লাইনের সঙ্গে দেবীর সম্পর্ক আছে তাহলে তা সম্পূর্ণ ভুল।' বন্দে মাতরম জাতীয় গানের তকমা পাওয়ার যোগ্য নয় বলেও উল্লেখ করেছিলেন জওহরলাল নেহরু, এই অভিযোগও তুলেছে গেরুয়া শিবির।
বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এদিন বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট এবং মুদ্রা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
উল্লেখ্য, ১৮৭৫ সালে নৈহাটির কাঁঠালপাড়ার বাড়িতে বন্দে মাতরম গানটি লিখেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। দিনটি ছিল অক্ষয় নবমী। ইংরেজির ৭ নভেম্বর। পরে ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে গানটিকে জুড়ে দেন লেখক। ১৮৮২ সালে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। পরের ইতিহাসটি সকলেরই জানা। এই গানই হয়ে ওঠে স্বাধীনতার মন্ত্র।