ভয়াবহ হিংসার দু'বছর পার। এই প্রথম মণিপুরে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রবল বৃষ্টির মাঝেই সড়কপথে গেলেন সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত চুরাচাঁদপুর এলাকায়। হিংসার এপিসেন্টার ছিল এটাই। মৃত্যু হয়েছিল ২৬০ জনের। সেই চুরাচাঁদপুরে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী বললেন, 'মণিপুরবাসী, কথা দিচ্ছি আমি আপনাদের পাশে থাকব।' তবে হিংসায় জর্জরিত মণিপুরের কথা বলার আগে তিনি অবশ্য একের পর এক উল্লেখ করে গেলেন, ডবল ইঞ্জিন সরকারের উন্নয়নের গাঁথা।
ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে শনিবার ৬৫ কিলোমিটার রাস্তায় যাত্রা করে চুরাচাঁদপুর পৌঁছন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে প্রবীণ এবং শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরিদর্শন করেন ত্রাণ শিবিরগুলিও। সঙ্গে ছিলেন মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রজেক্টের শিলান্যাস করেন। মণিপুর বর্তমান সরকারের আমলে কতটা উন্নত হয়েছে এবং কংগ্রেস সরকারের সময়ে কতটা পিছিয়ে ছিল, তা উদাহরণ স্বরূপ তুলে ধরেন তিনি। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা, ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার মতো প্রকল্পের কথা ফলাও করে প্রচার করেন তিনি। মোদী বলেন, 'মণিপুরের মাটি আশা এবং আকাঙ্খার ভূমি। মণিপুর নামের মধ্যে রয়েছে মণি, যা ভবিষ্যতে উত্তর পূর্ব ভারতের উজ্জ্বল মণি হয়ে উঠবে।কিন্তু হিংসা এই সুন্দর এলাকাকে গ্রাস করেছিল। মণিপুরের মানুষের সাহসিকতাকে আমি স্যালুট জানাই। আমি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেছি। ওরা ক্যাম্পে রয়েছে। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা অনেক বিবাদই এখন মিটে গিয়েছে। মানুষ এখন শান্তির পথ বেছে নিয়েছেন।'
প্রত্যেক গোষ্ঠীর কাছে তাঁর আবেদন, 'হিংসা ছেড়ে শান্তির পথ অবলম্বন করুন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। ভারত সরকার আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। মণিপুরের সঙ্গে রয়েছে। গৃহহীন পরিবারের জন্য ৭ হাজার নতুন বাড়ি তৈরির জন্য সাহায্য করছে সরকার। সম্প্রতি ৩ হাজার কোটি টাকার স্পেশাল প্যাকেজ বরাদ্দ করা হয়েছে। আদিবাসী যুব সম্প্রদায়ের স্বপ্নের কথা আমি জানি। এর জন্য সরকার সদা সচেষ্ট। তাঁদের উন্নয়নের জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মণিপুরের সংস্কৃতি নারীশক্তির প্রতীক। সরকারও সেই লক্ষ্যে সচেষ্ট। মণিপুরকে শান্তি, উন্নতি এবং সমৃদ্ধির প্রতীক তৈরির টার্গেট নিয়েছি। শান্তিস্থাপনার জন্য মণিপুরের মানুষের পাশে থাকবে ভারত সরকার।' মণিপুরে বরাবরই যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত, তাই ২০১৪ সাল থেকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়াস চালানো হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এই চুরাচাঁদপুর মূলত কুকি অধ্যুষিত এলাকা। এখানেই প্রথম মেইতেই গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের লড়াই শুরু হয়। যা ক্রমশ হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। কুকি সংগঠন অধ্যুষিত জেলাগুলি নিয়ে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি ওঠে। এদিকে ইম্ফল মূলত মেইতেই অধ্যুষিত এলাকা।