সংসদের বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের জবাবি ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Prime Minister Narendra Modi's Speech In Parliament Today)। এদিন বিভিন্ন ইস্যুতে কংগ্রেসকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে উঠে আসে সন্ত্রাস দমন, দুর্নীতি রোধ থেকে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলি। একনজরে দেখে নেওয়া যাক এদিন ঠিক কী কী বললেন প্রধানমন্ত্রী।
১. নৈরশ্যবাদীরা দেশের উন্নতি মেনে নিতে পারছেন না
লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, 'ভারতে নতুন সম্ভাবনা রয়েছে। এটা বুঝতে অনেকের কিছুটা সময় লাগবে। সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে ভারত এগিয়ে গেছে। ভারত একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। ভারতবর্ষের সমৃদ্ধিতে নিজেদের সমৃদ্ধি দেখছে বিশ্ব। হতাশায় নিমজ্জিত কিছু মানুষ এদেশের অগ্রগতি মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা ১৪০ কোটি দেশবাসীর পরিশ্রম দেখতে পাচ্ছেন না'।
২. স্টার্টআপে তৃতীয় ভারত
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গত নয় বছরে ভারতে ৯০ হাজার স্টার্টআপ এসেছে। স্টার্টআপের দিক থেকে বিশ্বে তিন নম্বরে পৌঁছেছি। এত অল্প সময়ে এবং করোনার সংকটময় সময়ে ১০৮টি ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে। একটি ইউনিকর্ন অর্থাৎ, ছয়-সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। আজ ভারত মোবাইল তৈরিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হয়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রীর নিরিখে বিশ্বে আমরা তিন নম্বরে'।
৩. কেলেঙ্কারির কারণে বিশ্বে দেশের বদনাম হয়েছে - প্রধানমন্ত্রী
এদিনের ভাষণে পূর্বতন ইউপিএ সরকারকে আরও একবার কড়া আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেন, 'যখন পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তখন তারা নোট ফর ভোটের নিয়ে ব্যস্ত ছিল'। 2G ও কয়লা কেলেঙ্কারির কথাও উল্লেখ করেন মোদী। তিনি বলেন, '২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এক দশকে দেশ প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে'।
৪. বিরোধীরা অভিযোগেই নয় বছর নষ্ট করেছে - প্রধানমন্ত্রী মোদী
বিরোধীদের আক্রমণ করে তিনি বলেন, 'ভারত গণতন্ত্রের মা। গণতন্ত্র আমাদের শিরায় রয়েছে। সমালোচনা হওয়া উচিত, কিন্তু বিরোধীরা অভিযোগেই নয় বছর নষ্ট করেছেন। নির্বাচনে হেরে গেলে তাঁরা ইভিএমকে দোষারোপ করেন, দুর্নীতির তদন্ত হলে এজেন্সিগুলোকে গালিগালাজ করেন'। তিনি আরও বলেন যে, 'ইডিকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কারণ ইডির জন্যই বিরোধীরা একত্রিত হয়েছেন'।
৫. 'সকলে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী কথা বলেছেন'
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'রাষ্ট্রপতি আদিবাসী সমাজের গর্ব বাড়িয়েছেন। তাঁর ভাষণ দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে। এখানে সবাই সেই আলোচনায় অংশ নেন। প্রত্যেকেই তাঁদের প্রবৃত্তি এবং উপলব্ধি অনুযায়ী কথা বলেছেন। এতে তাঁদের উদ্দেশ্যও প্রকাশ পেয়েছে। দেশের মানুষ সব দেখছেন'।
৬. ভারত আজ গোটা বিশ্বের ভরসা, তাতেও কিছু মানুষের দুঃখ - মোদী
করোনা প্রসঙ্গ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেক দেশে খাদ্য সঙ্কট চলছে। আমাদের প্রতিবেশী কিছু দেশের পরিস্থিতি শোচনীয়। এই রকম সময়েও ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্ অর্থনীতি। ভারত নিয়ে আজ গোটা বিশ্বের আশা রয়েছে, ভরসা রয়েছে'।
৭. সবচেয়ে বেশি লাভবান মধ্যবিত্তরা
মোদী বলেন, 'একটা দীর্ঘ সময় মধ্যবিত্তদের দিকে তাকানো হয়নি। আমাদের সরকার, মধ্যবিত্তদের সুরক্ষা প্রদান করেছে। তাঁদের সততাকে সম্মান দিয়েছে। আজ সরকারের প্রকল্প থেকে দেশের মধ্যবিত্তরাই সবচেয়ে লাভবান। ২০১৪-র আগে ১ জিবি ডেটার দাম ছিল দেড়শো টাকা। আজ তা কমে ১০টাকা'।
৮. দেড়শোর বেশি দেশকে টিকা
নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেড়শোর বেশি দেশকে সঙ্কটের সময়ে প্রয়োজন মতো ওষুধ, টিকা পাঠিয়েছে ভারত। দেশের প্রতিটি নাগরিক টিকা পেয়েছেন। করোনাকালে দুনিয়ার বড় বড় দেশ নাগরিকদের আর্থিক সাহায্য করতে চেয়েও পারেনি। কিন্তু একমাত্র ভারত, একমাত্র ভারত কয়েক সেকেন্ডে কোটি কোটি মানুষের কাছে ডিজিটাল সার্ভিসে আর্থিক সাহায্য করেছে।'
৯. জম্মু-কাশ্মীরে গণতন্ত্রের উৎসব
ভাষণে জম্মু কাশ্মীরের প্রসঙ্গ তুলে মোদী বলেন, 'আজ জম্মু-কাশ্মীরে লোকতন্ত্রের উৎসব হচ্ছে। প্রত্যেক বাড়িতে তিরঙ্গা পতাকা উড়ছে। কেউ কেউ বলতেন, তিরঙ্গা উড়লে উপত্যকায় অসুবিধে হবে। মজা দেখুন, এখন তাঁরাও সেখানে শামিল হয়েছেন'।
১০. মোদীর ওপরে দেশবাসীর ভরসা...
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মোদীর উপরে দেশবাসীর যে ভরসা, তা এদের বোঝার বাইরে। এই সব মিথ্যে অভিযোগ তোলা মানুষগুলোর উপরে কি ফ্রি রেশন পাওয়া ৮০ কোটি দেশবাসী ভরসা করবেন? যে কৃষকের অ্যাকাউন্টে বছরে ৩ বার পিএম কিষাণের টাকা জমা পড়ে, তাঁরা আপনাদের মিথ্যে অভিযোগে কী করে বিশ্বাস করবেন? যাঁদের রাস্তার ধারে রাত কাটাতে হত, সেই ৩ কোটি মানুষ যে ঘর পেয়েছেন, তাঁরা আপনাদের মিথ্যে অভিযোগ কী করে মেনে নেবেন? ১১ কোটি মহিলা শৌচালয় পেয়েছেন, তাঁরা আপনাদের মিথ্যে কী করে মেনে নেবেন'?
আরও পড়ুন - রাজ্যে এবার 'দুয়ারে পিজি' কর্মসূচি, 'রেফার রোগ' কমবে কি?