পুনে জেলার মাভাল তহসিলের তালেগাঁও দাভাদে রোববার (১৫ জুন) এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল কুন্ডমালা এলাকা। ইন্দ্রায়ণী নদীর উপর নির্মিত একটি পুরনো লোহার সেতু আচমকাই ভেঙে পড়ে। এই সেতুটি গত তিন মাস ধরে যানবাহনের চলাচলের জন্য বন্ধ ছিল। কিন্তু, তা সত্ত্বেও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি ও নজরদারির অভাবে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের যাতায়াত চলছিল সেতুর উপর দিয়েই। প্রবল বর্ষার কারণে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে যাওয়ায় জলের ভয়াবহ স্রোতের সামনে সেতুটি আর টেকেনি — মুহূর্তে ভেঙে পড়ে।
বিপর্যয়ের সময় সেতুর উপর প্রায় ১০০ জন!
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রোববার ছুটির দিন হওয়ায় প্রায় ১০০ থেকে ১২০ জন মানুষ নদীর ক্রমবর্ধমান জলস্তর এবং প্রবল স্রোত দেখার জন্য সেতুর উপর জড়ো হন। অনেকে আবার তাদের দুই চাকার যান নিয়ে সেতুর উপর উঠে পড়েন। ফলে সেতুর উপর বোঝা অত্যধিক বেড়ে যায়। সেই অতিরিক্ত ভার সইতে না পেরে আচমকাই সেতুটি ভেঙে পড়ে। ফলে বহু মানুষ এবং যানবাহন সহ নদীতে পড়ে যায়।
সরকারি ও স্থানীয় রিপোর্টে ভিন্ন মৃতের সংখ্যা
এই দুর্ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এখন পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয় বিধায়ক সুনীল শেলকে জানিয়েছেন, অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নদীর তীব্র স্রোতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন ভেসে গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫ থেকে ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
উদ্ধারকাজে ঝাঁপাল এনডিআরএফ
ঘটনার পরপরই পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড় থানা এলাকার আওতায় থাকা স্থানটিতে পৌঁছায় স্থানীয় পুলিশ, দমকল বাহিনী এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। উদ্ধারকাজ চলছে জোরকদমে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ১০-১৫ জন এখনও আটকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, "আমি এখনো সঠিক হতাহতের সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে প্রশাসন সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। এনডিআরএফ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।"
কেন সেতু খুলে দেওয়া হল?
যদিও এই সেতুটি তিন মাস আগে থেকেই যান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তা সত্ত্বেও কোনোভাবে এটি উন্মুক্ত ছিল এবং পর্যটকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের তরফে নজরদারির অভাবেই কি এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল?
বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র
জানা যাচ্ছে, পুনে জেলা প্রশাসন কমলা সতর্কতা জারি করে আগেই লোনাভালা, ভূষি বাঁধ-সহ বিভিন্ন পর্যটনস্থল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে পর্যটকদের ভিড় কিছুটা কম পরিচিত জায়গাগুলিতে সরে যায়। তালেগাঁওয়ের এই সেতুও তারই একটি উদাহরণ।