তিক্ততা, বিবাদ ও সংঘাতের অবসানের আহ্বান জানালেন সরসঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। অযোধ্যায় রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে আরএসএস প্রধান একটি নিবন্ধে লিখেছেন,'পক্ষ এবং বিপক্ষের মধ্যে যে বিবাদ তৈরি হয়েছে তার অবসান হওয়া উচিত। যে তিক্ততা তার সমাপ্তি দরকার। সমাজে বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিত করতে হবে যেন বিবাদের সম্পূর্ণ অবসান ঘটে। অযোধ্যাকে এমন একটি শহর হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত যেখানে কোনও যুদ্ধ নেই। সংঘাতমুক্ত জায়গা হোক অযোধ্যা।
কী লিখেছেন মোহন ভাগবত? সরসঙ্ঘ চালক লিখেছেন,'আমাদের ভারতের ইতিহাস, গত দেড় হাজার বছর ধরে হানাদারদের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম। প্রাথমিক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল লুণ্ঠন। কখনও কখনও আলেকজান্ডারের মতো আক্রমণের মতো লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্য বিস্তার। কিন্তু ইসলামের নামে বহিরাগত আক্রমণ সমাজে ধ্বংস ও বিচ্ছিন্নতা নিয়ে এসেছে। দেশের সমাজকে কলুষিত করার জন্য ধর্মীয় স্থান ধ্বংস করার প্রয়োজন ছিল। তাই বিদেশি হানাদাররা ভারতেও মন্দির ধ্বংস করেছে।'
ভাগবত আরও বলেছেন,'একবার নয়, বহুবার ভারতে আক্রমণ করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সমাজকে ভেঙে দেওয়া। যাতে ভারতীয়রা স্থায়ীভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের উপর নির্বিঘ্নে শাসন করা যায়। অযোধ্যায় শ্রী রামের মন্দির ধ্বংসও একই উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। হানাদারদের এই নীতি শুধু অযোধ্যা বা একটি মন্দিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, সমগ্র বিশ্বের জন্য ছিল।'
হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সংঘাতের আবহ ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল বলেও দাবি করেছেন ভাগবত। তিনি লিখেছেন,'হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে 'ডিভাইড এন্ড রুল' করেছে ব্রিটিশরা। যা আগে থেকেই প্রচলিত ছিল এদেশে। ঐক্য ভাঙতে ব্রিটিশরা অযোধ্যায় সংগ্রামী বীরদের ফাঁসি দিয়েছিল। রাম মন্দিরের জন্য সংগ্রাম চলছিল সেই সময় থেকে। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন সোমনাথ মন্দির সর্বসম্মতিক্রমে সংস্কার করা হয়, তখন এই ধরনের মন্দিরগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রামজন্মভূমির ব্যাপারে সকলে ঐক্যমতে আসতে পারত। কিন্তু রাজনীতির গতিপথ পাল্টে যায়। বৈষম্য ও তোষণের রাজনীতি শুরু হয়।'
অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ ভারতের ঐতিহ্যের উত্তরণ বলে জানিয়েছেন ভাগবত। তাঁর অভিমত,'অযোধ্যায় শ্রী রাম মন্দির নির্মাণ জাতীয় ঐতিহ্যের নবজাগরণের প্রতীক। আধুনিক ভারতীয় সমাজের আচার-আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির স্বীকৃতি। 'পত্রম পুষ্পম ফলম তোয়াম' পদ্ধতিতে মন্দিরে শ্রী রামকে পুজো করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন,'অহংকার, স্বার্থপরতা ও বৈষম্যের কারণে এই জগৎ ধ্বংসের উন্মত্ততায় ডুবে আছে। ডেকে আনছে সীমাহীন বিপর্যয়। সম্প্রীতি, ঐক্য, অগ্রগতি এবং শান্তির পথ দেখায়। ভারতবর্ষের পুনর্গঠন হতে চলেছে রাম জন্মভূমিতে শ্রীরাম লালার প্রবেশ ও তাঁর জীবনদর্শনের মাধ্যমে। মন্দির পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি ভারতবর্ষের পুনর্গঠন সম্পূর্ণ করার সংকল্প করেছি। আপনার হৃদয়ে যেন এই অনুভূতি থাকে। …জয় সিয়া রাম।'