লন্ডনের চ্যাথাম হাউস থিঙ্ক ট্যাঙ্কে এক আলোচনায় পাকিস্তানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ওই সাংবাদিক কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেন যে, ভারত 'অবৈধভাবে কাশ্মীর দখল' করেছে এবং সেখানে 'সত্তর লক্ষ কাশ্মীরিকে নিয়ন্ত্রণ করতে দশ লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে'। পাশাপাশি, তিনি জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করবেন।
জয়শঙ্করের কড়া জবাব
এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় জানান, কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারত ইতোমধ্যেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, 'কাশ্মীরে, আমরা বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি। ৩৭০ ধারা বিলোপ একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। এরপর কাশ্মীরের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আর সর্বশেষ ধাপে আমরা উচ্চ ভোটদানের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখন যে দিকটির জন্য অপেক্ষা করছি, সেটি হল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের পুনরুদ্ধার। একবার এটি হয়ে গেলে, কাশ্মীর সমস্যার পুরো সমাধান হয়ে যাবে।'
ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য
আলোচনার পরবর্তী পর্যায়ে, ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের বহুমেরু বিশ্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং আমেরিকার বর্তমান নীতির মধ্যে মিল রয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা এমন একজন রাষ্ট্রপতি ও প্রশাসন দেখছি, যা বহুমেরু বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি ভারতের স্বার্থের জন্যও ইতিবাচক।'
তিনি কোয়াড (ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সমন্বয়ে গঠিত জোট) সম্পর্কে বলেন, 'এটি এমন একটি মডেল, যেখানে প্রত্যেক দেশ তাদের ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এখানে কোনও ফ্রি রাইডার নেই।'
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও চিনের প্রসঙ্গ
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। এস জয়শঙ্কর জানান, 'আমাদের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছেন, এবং শুল্কসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা চলছে। আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছি।'
চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও তিনি বলেন, 'আমরা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করছি। তবে, আমাদের উদ্দেশ্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।'
ডলারের আধিপত্য ও ব্রিকসের অবস্থান
বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য প্রসঙ্গে এস জয়শঙ্কর বলেন, 'আমরা ডলার প্রতিস্থাপনের জন্য কোনও নীতি গ্রহণ করিনি। আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য ডলার গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি আরও বলেন, ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে এই বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে এবং 'ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে ডলারের বিরুদ্ধে কোনও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেই।'