এক কোটি টাকার পুরস্কার ও বিপুল সন্ত্রাসের পেছনে থাকা নকশাল নেতা চলপতি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ছত্তিশগড় ও ওড়িশার জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন, অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন। তাঁর অপরাধের শেষ লিঙ্কটি ছিল একটি সেলফি, যা তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে পরিণত হয়।
চলপতি, যার আসল নাম রামচন্দ্র রেড্ডি, অন্ধ্র প্রদেশের চিত্তুর জেলার বাসিন্দা। তিনি ছত্তিশগড় এবং ওড়িশায় নকশাল আন্দোলনে অন্যতম প্রধান নেতারূপে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বে ২০০৮ সালে ওডিশার নয়াগড়ে বড় হামলা চালানো হয়, যেখানে ১৩ নিরাপত্তা কর্মী নিহত হন। সেই হামলায় সশস্ত্র নকশালরা পুলিশ অস্ত্রাগার লুট করতে সক্ষম হয়। এরপর থেকেই তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর তালিকায় এক নাম্বার চিহ্নিত ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।
তবে, এই অপরাধী এতদিনের পরেও নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রতারণা করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু তার স্ত্রীর সঙ্গে একটি সেলফি তাকে ধরা পড়ার পথে নিয়ে আসে। ২০১৬ সালের মে মাসে, অন্ধ্র প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনী ও নকশালদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া একটি স্মার্টফোনে এই দম্পতির সেলফি মিলেছিল। সেলফিটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং এটি পুলিশের জন্য এক অমূল্য প্রমাণ হিসেবে পরিণত হয়।
এরপর, পুলিশ চলপতির ব্যক্তিত্ব এবং অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। গত কয়েক বছর ধরে চলপতি ছিল ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলার দরভাতে। তার হাঁটুর সমস্যা থাকলেও, তিনি তার কৌশল পরিবর্তন করে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করতেন।
চলপতির অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তার হত্যাকাণ্ডটি ঘটে একটি গোপন এনকাউন্টারে, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী মঙ্গলবার সকালে তার ওপর অভিযান চালায় এবং তাকে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এনকাউন্টারে মোট ১৪ জন নকশাল নিহত হন, যার মধ্যে চলপতিও ছিলেন।
চলপতি একজন বিশেষজ্ঞ গেরিলা যোদ্ধা। দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে বিশাল নকশাল তৎপরতা চালিয়েছিলেন। তাঁর হাত থেকে কয়েকটি বড় আক্রমণ এবং পুলিশ অস্ত্রাগার লুটের ঘটনা ঘটেছিল, যা দেশের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়ায়।
এরপর তিনি ২০০৪ সালে মাওবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ছত্তিশগড় এবং ওড়িশা অঞ্চলে তার নেতৃত্বে নকশালরা বিরাট তৎপরতা চালায়। ২০১১ সালে, তার নেতৃত্বে একটি অস্ত্রাগার লুটের চেষ্টা ব্যর্থ হলে পুলিশ তাঁর পিছু নেয়।