শুভাংশুদের গন্তব্য আর বেশি দূরে নয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের দিকে উড়ে গেছে শুধু মানুষ নয়, একটি পাঁচ ইঞ্চির তুলতুলে রাজহাঁস, যার নাম 'জয়'।
'জয়' কী?
এই ছোট্ট নরম খেলনা রাজহাঁসটি Axiom-4 মহাকাশ অভিযানের ‘জিরো-গ্র্যাভিটি ইন্ডিকেটর’। তবে প্রযুক্তির বাইরে, এটি হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক প্রতীক। ভারতীয় মহাকাশচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার জন্য ‘জয়’ কেবল এক খেলনা নয়, বরং এক অনুভব।
রাজহাঁসের পেছনে ঐতিহ্য ও দর্শন
ভারতীয় পুরাণ অনুসারে, রাজহাঁস বিদ্যার দেবী সরস্বতীর বাহন। তার রয়েছে পৌরাণিক ক্ষমতা। দুধ আর জলকে আলাদা করার, অর্থাৎ সত্য আর মিথ্যা, জ্ঞান ও অজ্ঞানকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতীক। শুভাংশুর মতে, এই মিশনের মূল লক্ষ্য হল জ্ঞান, বিশুদ্ধতা এবং চেতনা।
‘জয়’ শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের
Axiom-4 মিশনের চার নভোচারী চারটি ভিন্ন দেশ থেকে—ভারত, আমেরিকা, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, রাজহাঁস প্রতীক হিসেবে সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। মিশনের হাঙ্গেরিয় নভোচারী টিবোর কাপু এই হাঁসটির নাম রাখেন ‘জয়’।
যখন জয় ভেসে উঠবে...
মহাকাশযান যখন পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছবে এবং গ্র্যাভিটি-র সীমা ছাড়িয়ে যাবে, তখন জয়-ই প্রথম মহাকাশে ভেসে উঠবে। এই মুহূর্তের মধ্য দিয়েই বোঝা যাবে—মিশন সফলভাবে কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। তবে এই দৃশ্য কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং আবেগময়। একটি ছোট্ট খেলনার নীরব ভেসে ওঠা হবে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের ঊর্ধ্বে ওঠার প্রতীক।
এখন মহাকাশযানটি পৃথিবী থেকে ৪১৮ কিমি উচ্চতায় ঘণ্টায় ২৮,০০০ কিমি বেগে প্রদক্ষিণ করছে এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে। ভারতীয় সময় বিকেল ৪:৩০ মিনিটে নেমে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় ঠিক হয়েছে। মহাকাশে ভেসে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শুভাংশু বলেন, 'শুরুতে অদ্ভুত লেগেছিল, তবে পরে খুব মজার লেগেছে। দেয়ালে ভেসে হাতল ধরে কাজ করা, স্ট্র দিয়ে জল খাওয়া, এমনকি কিছু যোগাসনের ভঙ্গিও করেছি আমরা।'