বিবাহ নামে প্রতিষ্ঠানটি যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মহিলাদের দমন করার একটি হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এমনটাই মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্তের। দেশের শীর্ষ আদালত এই বিষয়টিকে 'অস্বস্তিকর সত্য' বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে বিচারপতি এ-ও মনে করছেন, ধীরে ধীরে সাম্প্রতিক আইনি এবং সামাজিক সংস্কার বিবাহকে পারস্পরিক সম্মান এবং সমানাধিকারের পার্টনারশিপ হিসেবে দেখা শুরু করেছে।
ক্রস কালচারাল পারসপেকটিভস: এমারজিং ট্রেন্ডস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন ফ্যামিনি ল ইন ইংল্যান্ড অ্যান্ড ইন্ডিয়া নামে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, 'বিভিন্ন মহাদেশে, নানা সংস্কৃতিতে যুগ যুগ ধরে বিবাহ নামে প্রতিষ্ঠানটিকে মহিলাদের দমন করার জন্যই মূলত ব্যবহার করা হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'এটা বরাবরের অস্বস্তিকর একটি সত্য। তবে বর্তমানে আইনি ও সামাজিক সংস্কার ধীরে ধীরে বৈষম্যের জায়গা থেকে বিবাহকে মর্যাদা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সমতার সাংবিধানিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি পবিত্র সম্পর্কে পরিণত করেছে।'
বিচারপতি সূর্য কান্ত মনে করেন, ভারতে বিচার বিভাগ এবং আইনসভা উভয়ই নারীর অধিকার রক্ষার জন্য আইনি কাঠামো তৈরির পদক্ষেপ করেছে। পূর্ববর্তী সময়ে ভারতে বিবাহকে একটি দেওয়ানি চুক্তি হিসেবে নয় বরং একটি পবিত্র ও স্থায়ী ধর্মানুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হত। ঔপনিবেশিক পূর্ব সময়ে পারিবারিক সম্পর্কগুলি সংহিতাবদ্ধ আইনের চেয়ে সামাজিক ও নৈতিক নিয়ম দ্বারা বেশি নিয়ন্ত্রিত হত। ক্রস বর্ডার বিয়ের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলি তৈরি হয় তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিস্তারিত গাইডলাইন রয়েছে। ভিন দেশি বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত নানা বিচার লিপিবদ্ধ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন বিচারপতি। তবে এই ধরনের বিয়ের সম্পর্ক যদি প্রতারণার মাধ্যমে হয়ে থাকে অথবা প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতি বা এই দেশের প্রযোজ্য মৌলিক আইনগুলির পরিপন্থী হয়ে তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, সাফ জানিয়ে দেন বিচারপতি।
বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় শিশুরা জড়িত থাকলে বিষয়টি জটিল হয়ে যায় বলেই মনে করছেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। তিনি বলেন, 'এই ক্ষেত্রে আদালতকে comity of courts নীতির সম্মান করতে হবে যা বিভিন্ন বিচারব্যবস্থার মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে। তবে শিশুর কল্যাণকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়।'