পহেলগাঁও হামলার পর থেকে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জঙ্গিদের কাছে আগে থেকেই পহেলগাঁওয়ের ছবিও তথ্য ছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। কীভাবে সেই ছবি পৌঁছল সেই বিষয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই জ্যোতি মলহোত্রা নামের এক যুবতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হরিয়ানার বাসিন্দা জ্যোতি দেশের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ভ্লগ বানাত। সে একাধিকবার পাকিস্তানেও গিয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিযোগ, জ্যোতি কেবল ভ্লগ বানাতে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াত না। তার উদ্দেশ্য ছিল, তথ্য সংগ্রহ ও পাচার করা।
এই ঘটনা সামনে আসার পর অনেকের মনেই প্রশ্ন, তাহলে কি সব জায়গায় ছবি তোলা যাবে না? উত্তর হল, যে সব ছবি তুললে বা শেয়ার করলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে সেসব থেকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন বলতে এমন যে কোনও ঘটনাকে বোঝায় যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করেছেন। শত্রু দেশের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করেছেন, অথবা এমন কিছু করছেন যা দেশের জনগণকে বিপন্ন করতে পারে। বর্তমানে প্রায় সবার হাতেই মোবাইল। মানুষের ছবি তোলার প্রবণতাও বেড়েছে। অনেক সময় আমরা অজান্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন জায়গার তথ্য বা ছবি পোস্ট করে দিই, যা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।
কোন কোন জায়গার ছবি তোলা নিষিদ্ধ ?
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত সংবেদশীল জায়গা হল সেনা ঘাঁটি, বিমানবন্দরের রানওয়ে, নৌবাহিনীর জাহাজ বা সেনা প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনিসপত্র। এছাড়াও পারমাণবিক কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনিসপত্র, পরিকল্পনা বা মডেলের ছবি তোলা যায় না। এমনকী দেশের কোনও বিজ্ঞানীর তথ্য শেয়ার করাও যায় না। ১৯২৩ সালের ভারতীয় সরকারি গোপনীয়তা আইনের অধীনে এটি অপরাধ।
এছাড়াও অনুমতি ছাড়া সরকারি ভবন, সীমান্ত চেকপয়েন্ট, রেল স্টেশনের ছবি তোলা যায় না। ভারত-পাকিস্তান, ভারত-বাংলাদেশ বা ভারত-চীন সীমান্তবর্তী এলাকায় ছবি তোলার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এই এলাকাযগুলোতে ছবি বা ভিডিও তোলার জন্য বিএসএফ বা নিরাপত্তা সংস্থার অনুমতি নিতে হবে।
যেসব জায়গায় উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ থাকে সেখানেও ছবি তোলা বারণ। উদাহরণস্বরূপ আন্দামান-নিকোবরের উত্তর সেন্টিনেল উপজাতিকে রক্ষা করার জন্য, একটি নির্দিষ্ট দ্বীপকে সীমাবদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। এমন জায়গার ছবি তোলা আইনত দণ্ডনীয়।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে গল্প বা তথ্য শেয়ারও বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে। যেমন পরিচালক মহেশ ভাটের ছেলের সঙ্গে লস্করের জঙ্গি ডেভিড হেডলির ভালো সম্পর্ক ছিল। পরে যার মূল্য চোকাতে হয় রাহুলকে। আসলে রাহুলের সঙ্গে যখন দেখা হয় তখন ডেভিড হেডলি নিজেকে প্রাক্তন মার্কিন সেনা জওয়ান হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। যদিও পরে ডেভিডের প্রকৃত পরিচয় সামনে আসে। রাহুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু, তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
ছবি তোলার অপরাধে সাজা
ছবি তোলার জন্য সাজার উল্লেখ রয়েছে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে। এর ধারা ৩ এবং ৫ অনুসারে, নিষিদ্ধ স্থানের ছবি, পরিকল্পনা বা মডেল শেয়ার করলে দীর্ঘ কারাদণ্ড হতে পারে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামালও হতে পারে। বিমানবন্দর এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির ছবি তোলাও নিষিদ্ধ। যারা এটি লঙ্ঘন করে তাদের ক্ষেত্রে বিমান বিধি ১৯৩৭ প্রযোজ্য।