India-China border tension: ভারত-চিন সীমান্তে ফের ঘনাচ্ছে উত্তেজনার পরিবেশ। ভারতের বারবার পর্যালোচনার প্রচেষ্টায় কোনও লাভ হচ্ছে না। ক্রমেই ভারতের দিকে এগিয়ে আসার অভ্যাস জারি রেখেছে চিন। আর তারই প্রমাণ মিলল একগুচ্ছ উপগ্রহ চিত্তে। স্যাটেলাইট থেকে তোলা এই ছবিগুলি থেকেই স্পষ্ট, ঠিক কীভাবে জমি দখল করে রীতিমতো নির্মাণ চালাচ্ছে বেজিং। প্যাংগং সো লেকের উত্তর দিকে একটি বিশাল চিনা সেটেলমেন্টের এই ছবি আপনাকেও ভাবতে বাধ্য করবে।
২০২০ সালে ভারতের সঙ্গে চিনের বর্ডারের তিক্ততা যে কোনও জায়গায় পৌঁছেছিল, তা কারও অজানা নয়। ঠিক যেখানে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে চিনের সংঘর্ষ হয়েছিল, তার থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার পূর্বের কিছু ছবি চমকে দিচ্ছে সবাইকে। উল্লেখ্য, এই অংশটি কিন্তু ভারতের আঞ্চলিক দাবির বাইরে অবস্থিত। Pangong Tso, বিশ্বের সর্বোচ্চ লবণাক্ত জলের হ্রদ। ভারত ও চিন-শাসিত তিব্বতের সীমানা জুড়ে এই লেক বিস্তৃত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ম্যাক্সার টেকনোলজিস গত ৯ অক্টোবর এই স্যাটেলাইট ছবিগুলি তুলেছে। তাতে একটু-আধটু নয়, প্রায় ১৭ হেক্টর এলাকা জুড়ে দ্রুত নির্মাণকাজ চলার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। ৪,৩৪৭ মিটার উচ্চতায় ইয়েমাগু রোডের কাছে এই এলাকাটা পড়ে। এখানে নির্মাণকাজের এবং মাটি খোঁড়ার যন্ত্রপাতি রয়েছে। তক্ষশীলা ইনস্টিটিউশনের গবেষক ওয়াই নিতিয়ানন্দম জানালেন, 'বসবাস করার মতো ঘরবাড়ি এবং বড় প্রশাসনিক ভবন সহ ১০০-টিরও বেশি বিল্ডিং তৈরি করা হচ্ছে৷ খোলা জায়গা এবং সমতল জমিও রয়েছে। সেখানে সম্ভবত পার্ক বা খেলাধুলার জন্যও জায়গা রাখা হতে পারে।' ফলে শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর অস্থায়ী তাঁবু নয়, রীতিমতো পাকা বাসস্থান তৈরি করছে চিন।
দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি ১৫০-মিটার-লম্বা আয়তক্ষেত্রাকার এলাকা দেখা যাচ্ছে। গবেষকদের অনুমান, এখানে বড় আকারের হেলিপ্যাড তৈরি করা হতে পারে।
ওপেন সোর্স স্যাটেলাইট ইমেজের বিশ্লেষণ করা যাক। দেখা যাচ্ছে, হ্রদের দিকে ঢালু নদীর তলদেশে রয়েছে। সেখানে ২০২৪ সালের এপ্রিলের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। সামরিক সূত্রে খবর, এই স্থানটি সম্ভবত দু'টি অংশে ভাগ করেছে চিন। প্রশাসনিক জোন ও অপারেশনাল জোন।
নির্মাণস্থলের কাছে বেশ কয়েকটি ছোট ঘর রয়েছে। সেখানের প্রতিটিতে ছয় থেকে আটজন করে লোক থাকতে পারে। ছোট-বড় মিলিয়ে বিভিন্ন বিল্ডিং দ্রুত তৈরি করা হচ্ছে।
উচ্চ শিখরের পিছনে বসতি স্থাপনের অবস্থান এটির কৌশলগত সুবিধাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, কাছাকাছি অঞ্চল থেকে দৃশ্যমানতা সীমিত করে। "আশেপাশের উচ্চ শিখরগুলি ভূমি-ভিত্তিক নজরদারি সরঞ্জাম থেকে সাইটটিকে অস্পষ্ট করে," নিতিয়ানন্দম উল্লেখ করেছেন৷ সামরিক সূত্র অনুমান করে যে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে, বসতিটি একটি "অ্যাড-হক ফরোয়ার্ড বেস" হিসাবে কাজ করতে পারে, যা চীনা বাহিনীর প্রতিক্রিয়ার সময় হ্রাস করে।
ইন্দো-তিব্বত সীমান্তের একজন পর্যবেক্ষক প্রকৃতি দেশাই। তিনি অবশ্য এর আরও একটি ব্যাখ্যা প্রদান দিচ্ছেন। তাঁর ধারণা তিব্বতি যাযাবরদের জন্য এই স্থানটি তৈরি করা হতে পারে। এই স্থানটিকে চাংজুন নুরু বলা হয়। সুইডিশ ভৌগোলিক সেভেন হেডিনের 'সেন্ট্রাল এশিয়া অ্যাটলাস' ম্যাপের মেমোয়ারে এই ঐতিহাসিক ক্যাম্প সাইটের উল্লেখ আছে। প্রকৃতি দেশাইয়ের মতেস সীমান্ত প্রতিরক্ষার জন্য সম্ভবত এই গ্রাম তৈরি হচ্ছে না। বরং তিব্বতি যাযাবরদের জন্যই সম্ভবত এটা তৈরি করছে চিন। কারণ, গত দুই দশকে চিনের সরকার বিভিন্ন স্থানে তিব্বতি যাযাবরদের জন্য স্থায়ী পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। সেই তার সঙ্গে এই গ্রামের প্ল্যানের অনেকটাই মিল আছে।
এই স্থানের কাছাকাছি জলের উত্সও রয়েছে। ফলে জায়গাটি নির্মাণ কাজ চালানো ও বসতি স্থাপনের জন্য আদর্শ। কিন্তু এমনিতে এই জায়গাটা খুব দুর্গম। বিশেষত নভেম্বর থেকে এখানে তাপমাত্রা হু-হু করে কমে যাবে। তখনও চিন কীভাবে নির্মাণ চালিয়ে যায়, এবং এখানে আদৌ বসতি তৈরি হয় কিনা, এখন সেটাই দেখার। এর পিছনে চিনের অভিসন্ধী কী থাকতে পারে, সেটাও ভাবাচ্ছে কূটনীতিবিদদের।