লক্ষ্য ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের সংস্কার। শুক্রবার লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই তিন আইনই সেই ব্রিটিশ আমল থেকে দেশে লাগু রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, সরকারের লক্ষ্য হল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, শাস্তি দেওয়া নয়। তিনি বলেন, যেসকল আইন বাতিল করা হবে, তার মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনকে রক্ষা ও শক্তিশালী করা। বর্তমান যুগে তা আর প্রাসঙ্গিক নয়। শাস্তি দেওয়ার ভাবনা থেকে এই আইনগুলি সাজানো হয়েছিল। বিচার দেওয়ার লক্ষ্য ছিল না। সংশোধনের মাধ্যমে তাতেই বদল আনা হবে। তিন আইনের সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকদের ন্যায়-বিচার সুনিশ্চিত করা হবে।
ইন্ডিয়ান জাস্টিস কোড, ২০২৩, ইন্ডিয়ান সিভিল ডিফেন্স কোড, ২০২৩ এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স বিল, ২০২৩- এই তিনটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বিলগুলি পরীক্ষার জন্য একটি সংসদীয় প্যানেলে পাঠানো হবে। অমিত শাহ বলেন, নয়া আইনে শাস্তি দেওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। বরং ন্যায়বিচার দেওয়াই এর উদ্দেশ্য। অমিত শাহ বলেন, ১৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে দেশের সামনে ৫টি শপথ নিয়েছিলেন। সেই সময়েই তিনি শপথ নিয়েছিলেন যে, দেশ থেকে আমরা দাসত্বের সমস্ত লক্ষণ মুছে দেব। আজ আমি যে তিনটি বিল নিয়ে এসেছি, সেগুলি মোদীজির এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে।
বিল অনুযায়ী, নয়া সংশোধনীর মাধ্যমে মোট ৩১৩টি পরিবর্তন করা হবে। সরকার ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন এনেছে। যেসকল ধারায় ৭ বছরের বেশি সাজা হয়, সেখানে ফরেনসিক টিমের প্রমাণ সংগ্রহ করার নিয়ম জারি করা হবে। এছাড়াও দেশদ্রোহের শাস্তিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। এতদিন দেশদ্রোহের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ছিল। এবার সেই ৩ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দাঁড়াবে।
২০২৭ সালের মধ্যে দেশের সব আদালতই কম্পিউটারাইজড করা হবে। কেউ গ্রেফতার হলে সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হবে।
৩ বছর পর্যন্ত শাস্তিযোগ্য ধারার বিচার সংক্ষিপ্ত করা হবে। মামলার শুনানি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত করা হবে। অভিযোগ গঠনের ৩০ দিনের মধ্যে বিচারককে রায় দিতে হবে। যদি কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে ১২০ দিনের মধ্যেই মামলা শুরুর অনুমতি দিতে হবে।
প্রস্তাবিত নতুন ধারা
১৪৫: ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা যুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করা। বর্তমানের ১২১ নম্বর ধারার মতোই।
১৪৬: যুদ্ধ চালানোর ষড়যন্ত্র। বর্তমানের 121A ধারার অনুরূপ।
১৪৭: ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্র সংগ্রহ করা। বর্তমানে ১২২ ধারার অনুরূপ।
দেশদ্রোহ আইনের অবলুপ্তি ঘটানো হবে। এর পরিবর্তে, এখন ১৫০ ধারার অধীনে চার্জ গঠন করা হবে। অর্থাৎ ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য ক্ষতিকর কাজ হিসাবে তা গণ্য করা হবে।