আর সর্বভারতীয় দল রইল না তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল হারাল জাতীয় দলের মর্যাদা। সেই সঙ্গে সিপিআই এবং এনসিপি-ও জাতীয় দলের তকমা খোয়াল। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেল তৃণমূল। ঘাসফুল শিবির সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারে দল। জেনে নেওয়া যাক কোন কোন শর্ত পূরণ করতে না পারায় সর্বভারতীয় মর্যাদা হারাল তৃণমূল?
জাতীয় দলের তকমা কীভাবে পেয়েছিল তৃণমূল?
২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর সর্বভারতীয় দল হিসেবে তৃণমূলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের ফল দেখে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সে বছর ৫ টি রাজ্যে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল মমতার দল। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মণিপুর, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড ও অসমে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। পশ্চিমবঙ্গে ৪২ টি আসনের মধ্যে ৩৪ টি গিয়েছিল তৃণমূলের ঝুলিতে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় পরিচিতি নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন।
কোন তিন শর্তে জাতীয় দলের মর্যাদা?
জাতীয় দল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি পূরণ করা জরুরি।
প্রথমত, লোকসভা নির্বাচনে অন্তত তিনটি রাজ্যে প্রার্থী দিতে হবে একটি দলকে। সেই সঙ্গে জিততে হবে দেশের মোট লোকসভা আসনের ২ শতাংশে।
দ্বিতীয়ত, লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৪টি রাজ্যে ৬ শতাংশ করে ভোট পেতে হবে। এবং এক বা তার বেশি রাজ্যে পেতে হবে ৪টি লোকসভা আসন।
তৃতীয়ত, ৪টি বা তার বেশি রাজ্যে রাজ্যদলের তকমা। উপরোক্ত তিন শর্তের যে কোনও একটি পূরণ করলেই মেলে জাতীয় দলের তকমা। যার কোনওটাই মানদণ্ডই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল পূরণ করতে পারেনি। ফলে জাতীয় দলের তকমা হারাল তারা।
কেন তৃণমূল হারাল তকমা?
প্রথম শর্ত - ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজ্যে প্রচারে গেলেও বাংলার বাইরে কোথাও প্রার্থী দেননি মমতা। ফলে অন্তত তিনটি রাজ্য থেকে ভোটে লড়ার শর্ত পূরণ হয়নি। তবে ২ শতাংশের বেশি আসনে জিতেছিল তৃণমূল। ৫৪৩ টি আসনের মধ্যে তারা বাংলায় পেয়েছিল ২৪ টি আসন। এতে শর্তের দ্বিতীয় অংশ পূরণ হয়নি।
দ্বিতীয় শর্ত- ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মেঘালয়ে তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট। আর ১ শতাংশ ভোট ত্রিপুরায়। তার আগে ২০২২ সালে গোয়ায় তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তি ৫.২১ শতাংশ। ফলে ৬ শতাংশ ভোটে শর্ত পূরণ হয়নি।
তৃতীয় শর্ত-অন্তত ২টি বিধানসভা আসন ও কমপক্ষে ৬ শতাংশ ভোট পেলে রাজ্য দলের তকমা পেলে। শুধুমাত্র মেঘালয়েই ৫ টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। ফলে তৃতীয় শর্তও পূরণ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন- তৃণমূলে অভিমানী মমতা ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ! একের পর এক ঘটনায় কীসের ইঙ্গিত?
জাতীয় দলের মর্যাদা থাকার সুবিধা?
১। জাতীয় দলের প্রতীক নির্দিষ্ট করা থাকে। সারা দেশে কেউ ব্যবহার করতে পারে না। অন্যথায় প্রতীক ‘ফ্রি প্রতীক’ হিসেবে গণ্য হবে।
২। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় একজন প্রস্তাবক হলেই চলে।
৩। ভোটার তালিকা জাতীয় দলকে বিনামূল্যে দেয় নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীরাও পান বিনামূল্যে ভোটার তালিকা।
৪। দলের অফিস খোলার জন্য সরকারের তরফে ভবন বা জমি দেওয়া হয়।
৫। ভোটের প্রচারে সর্বোচ্চ ৪০ জন তারকা প্রচারক রাখতে পারেন। অন্যথায় ২০ জন।
৬। নির্বাচনের আগে জাতীয় ও রাজ্যস্তরের টেলিভিশন ও রেডিওয় প্রচার করার অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে দলগুলি।
কী ক্ষতি হল?
১। নির্বাচনী প্রতীক ব্যালট বা ইভিএমে প্রথম দিকে থাকবে না। জাতীয় দলগুলিই প্রথমে ঠাঁই পায়।
২। এবার থেকে আর 'সর্বভারতীয়' শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না তৃণমূল। অর্থাৎ 'all India Trinamool congress' বলা যাবে না।
৩। সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনের কমিশনের ডাকা বৈঠকে থাকতে পারবে না তৃণমূল। অর্থাৎ নির্বাচন সংক্রান্ত তাদের কোনও মতামত জানাতে পারবে না।