গ্রেফতার হলে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণে নতুন বিল এনেছে কেন্দ্র। এই বিলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধী শিবির। বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র এটা, এমনটাই দাবি কংগ্রেসের। এই বিল অসংবিধানিক বলেই দাবি করেন বিরোধী নেতারা। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করছেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বুধবার সাংবাদিক সম্মলনে সংবিধান সংশোধনী বিল ইস্য়ুতে কেন্দ্রকে কার্যত তুলোধোনা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি দাবি করলেন, SIR থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কাপুরুষ বলে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, 'এই সরকার মানুষের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয়। শুধু যে কোনও মূল্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করছে।' অভিষেকের কথায়, 'কাউকে রাজনৈতিক শত্রুতায় গ্রেফতার করা হলে তিনি আর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকুও পাবেন না।'
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'কেন্দ্র জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্য সরকারকে ফেলতে সবরকম চেষ্টা করছে কেন্দ্র।' কেন্দ্রকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, 'বিরোধীদের দমন করতেই এই বিল। বিজেপি ভয় পায়, তাই তদন্তকারী সংস্থাকে হাতিয়ার করছে।' এরপরই তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে তদন্তাধীন মামলাগুলোতে নেতাদের গ্রেফতার করে বছরের পর বছর জেলে রাখা হয়, সেটা কোন আইনে? অপরাধ প্রমাণিত না হলে কেন একজনকে জেলবন্দি রাখা হবে সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। এরপরই শর্তসাপেক্ষে ‘জনপ্রতিনিধি গ্রেফতারি’ বিল সমর্থনের কথা শোনা যায় অভিষেকের গলায়। এ ব্যাপারে সরাসরি অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক বলেছেন, 'তদন্তকারী সংস্থা যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, তার প্রমাণ কোথায়? আমরা বলছি ৩০ দিন নয়, ১৫ দিন সময় দিন। ১৬ দিনের মাথায় পদত্যাগ করবে সেই মন্ত্রী কিন্তু যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত করতে না পারলে যে অফিসার গ্রেফতার করবে তাকেও দ্বিগুণ সময় জেলে রাখতে হবে। পারবেন? তাহলে বুঝব, আপনার ৫৬ ইঞ্চির ছাতি রয়েছে।'
বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ইঙ্গিত। অভিষেকের কটাক্ষ, '৩০৩ থেকে ২৪০-তে নেমে এসেছে বিজেপি। ক্ষমতা হারানোর ভয়েই আজ এমন বিল আনা হচ্ছে। জনগণের সমস্যা নিয়ে এদের কোনও মাথাব্যথা নেই। জিনিসপত্রের দাম আগুন, কৃষক পাচ্ছেন না ফসলের দাম, সীমান্ত সুরক্ষা, বেকারত্ব— কোথাও সরকার কার্যকর নয়।' অভিষেক আরও বলেন, 'বিজেপির ২৮ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।এর মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে খুন, নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ। তাও তো তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেই। শুভেন্দু অধিকারী কিংবা হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধেও কোনও পদক্ষেপ নেই। আমাদের জন্য এক আইন আর বিজেপির জন্য অন্য আইন? তাহলে কি এই বিল শুধু বিরোধীদের জন্য?'
অভিষেকের আক্রমণ, ‘ওরা গায়ের জোরে সংবিধান সংশোধন করতে চায়। ভাবুন ওদের হাতে ৪০০ সাংসদ থাকলে কী হত? মানুষ আজ রুখে দিয়েছে। SIR থেকে নজর ঘোরানোর মরিয়া প্রচেষ্টা। আমাদের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে নিপুণ ভাবে এটা করার চেষ্টা করেছে। ওয়েলে নেমে আমরা সরব হয়েছি। আমাদের কারণেই লোকসভা স্থগিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০ জন মার্শাল নিয়ে কাপুরুষের মতো বিল ইন্ট্রোডিউস করতে হয়েছে’।