পলাশীর যুদ্ধে তাঁর ভূমিকার জন্য এমনিতেই বিশ্বাসঘাতক তকমা পেয়েছেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সেনাপ্রধান মীর জাফর। এবার NCERT-র স্কুলের পাঠ্যবইতেও একই তকমা পেলেন তিনি। সদ্য প্রকাশিত অষ্টম শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞানের বইয়ে এক্সপ্লোরিং সোসাইটি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড বিয়ন্ড - পর্ব ১-এ মীর জাফরকে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পলাশীর যুদ্ধ বাংলার নবাব এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। কোম্পানির সেনার নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। পাঠ্যবইয়ে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পলাশীর যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন।
"ব্রিটিশদের প্রবেশ" অংশে লেখা আছে, রবার্ট ক্লাইভ নবাবের সামরিক কমান্ডার মীর জাফরের সঙ্গে একটি ষড়যন্ত্র করেছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতার বিনিময়ে মীর জাফরকে নতুন নবাব হিসেবে বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্লাইভ। কলকাতা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে মুর্শিদাবাদের পলাশীতে এই যুদ্ধ হয়েছিল। কিছু ফরাসি বাহিনী নবাবকে সহায়তা করেছিল, কিন্তু মীর জাফরের বাহিনী ব্রিটিশদের বিজয় নিশ্চিত করে। আজও, ভারতে 'মীর জাফর' 'বিশ্বাসঘাতক' এর সমার্থক শব্দ হিসেবে রয়ে গিয়েছে!'
যদিও, পাঠ্যবইয়ের আগের সংস্করণে কেবল পলাশীর যুদ্ধের কিছুটা অংশ বর্ণনা করা হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ ছিল, 'নবাবের পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সিরাজ-উদ-দৌলার অন্যতম সেনাপতি মীর জাফরের নেতৃত্বাধীন বাহিনী কখনও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। সিরাজকে পরাজিত করার পর ক্লাইভ তাঁকে নবাব করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।'
'বিভাজন ও শাসন কৌশলের' এর অংশ হিসেবে একই অংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে 'বিভাজন ও শাসন নীতির অধীনে ব্রিটিশরা ভারতীয় সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বিভাজনগুলিকে কাজে লাগাতে সমানভাবে দক্ষ ছিল, তারা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা চিহ্নিত করেছিল এবং প্রায়শই উৎসাহিত করেছিল।'
যদিও উভয় পাঠ্যপুস্তকে পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। পুরনো পাঠ্যপুস্তকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে কীভাবে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ব্যবসা বাণিজ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নবাবদের মধ্যে যুদ্ধের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। নতুন বইতে শিক্ষা হিসেবে নবাবদের ভূমিকা এবং তাদের প্রতিরোধকেও কমিয়ে দেখানো হয়েছে।
মহীশূরের শাসকদের অপসারণ - টিপু সুলতান এবং হায়দার আলি
ভারতে মুঘল শাসনের ইতিহাসের পরিবর্তনের পর মহীশূরের শাসক হায়দার আলির পুত্র টিপু সুলতান এবং চারটি ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও আগেই সংস্করণে এই প্রসঙ্গগুলি ছিল। আগের সংস্করণের পাঠ্যপুস্তকের একটি অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের থেকে কঠোর প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে টিপু সুলতানকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। তাঁর প্রশাসনিক সংস্কার এবং ফরাসিদের সঙ্গে কৌশলগত জোট ঔপনিবেশিক প্রতিরোধের আখ্যানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। যাইহোক, পাঠ্যবইয়ের নতুন সংস্করণে এসব নেই। যদিও নতুন পাঠ্যপুস্তকে সাঁওতাল বিদ্রোহ, কোল বিদ্রোহ এবং অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধের মতো অন্যান্য ঔপনিবেশিক-বিরোধী আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে।