
উদয়পুরের একটি আইটি সংস্থার ম্যানেজারের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তাঁর দাবি, চলন্ত গাড়িতেই তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। জ্ঞান ফিরে পেয়ে তিনি দেখেন, একটি কানের দুল নেই, মোজা ও অন্তর্বাসও উধাও, শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সংস্থার সিইও, এক মহিলা নির্বাহী প্রধান এবং তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনার শুরু যেভাবে
২০ ডিসেম্বর শোভাগপুরার একটি হোটেলে কোম্পানির সিইও-র জন্মদিন ও নববর্ষের পার্টি ছিল। রাত ৯টার দিকে সেখানে পৌঁছন নির্যাতিতা। অনুষ্ঠান চলে গভীর রাত পর্যন্ত। রাত সাড়ে ১টার পর অসুস্থ বোধ করায় তিনি বাড়ি ফিরতে চান। ঠিক সেই সময়ে ‘আফটার পার্টি’র কথা বলে তাঁকে জোর করে একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িতে আগে থেকেই ছিলেন মহিলা নির্বাহী প্রধানের স্বামী ও কোম্পানির সিইও। তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়, বাড়িতে নামিয়ে দেওয়া হবে।
পথে একটি দোকানে গাড়ি থামে, ধূমপানের সামগ্রী কেনা হয়। এরপর গাড়ির ভেতরেই তাঁকে ধূমপান করতে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে, স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যায়।
‘জ্ঞান ফিরতেই বুঝলাম কী হয়েছে’
ভুক্তভোগীর বক্তব্য, মাঝেমধ্যে জ্ঞান ফিরে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চলছে। তিনি বাধা দিতে চাইলেও অভিযুক্তরা থামেনি। অভিযোগ অনুযায়ী, রাত দেড়টা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে গাড়িতেই তিনজন মিলে তাঁকে ধর্ষণ করে। ভোরের দিকে তাঁকে বাড়ির কাছে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুরোপুরি জ্ঞান ফিরে শরীরের যন্ত্রণা ও আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করেন। তখনই বুঝতে পারেন, কানের দুল, মোজা ও অন্তর্বাস নেই।
ড্যাশক্যামের রেকর্ডিংই বড় সূত্র
ঘটনার পর তিনি বুঝতে পারেন, যে গাড়িতে রাতভর ছিলেন তাতে ড্যাশক্যাম লাগানো ছিল। অডিও-ভিডিও পরীক্ষা করে কথোপকথন ও কণ্ঠস্বর শনাক্ত করেন, যা তাঁর সন্দেহকে আরও জোরালো করে। এই রেকর্ডিং তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়েছে।
পুলিশি তদন্ত ও গ্রেফতার
উদয়পুর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর তদন্ত জোরদার হয়। জেলা পুলিশ সুপার যোগেশ গোয়েল জানান, ভুক্তভোগীর বয়ান, মেডিকেল রিপোর্ট ও প্রযুক্তিগত প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা এগোচ্ছে। মেডিকেল পরীক্ষায় শরীরে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এএসপি মাধুরী ভার্মার নেতৃত্বে তদন্ত চলছে।
পুলিশ সংস্থার সিইও জয়েশ প্রকাশ সিসোদিয়া, সহ-অভিযুক্ত গৌরব সিরোহি এবং কোম্পানির মহিলা নির্বাহী প্রধানকে গ্রেফতার করেছে। তিনজনকেই আদালতে পেশ করা হবে। ভুক্তভোগীকে নেশাগ্রস্ত করতে কোনও বিশেষ পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ড্যাশক্যামের অডিও-ভিডিও তদন্তের কেন্দ্রে রয়েছে।
অভিযুক্তরা কারা
গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন সুখাদিয়া সার্কেলের স্কাই মেরিনা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জয়েশ প্রকাশ সিসোদিয়া, সুখেরের হিতোয়ানা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা গৌরব সিরোহি এবং সংস্থার এক মহিলা নির্বাহী প্রধান। পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং মামলার সব দিক নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।