
উন্নাও ধর্ষণ মামলার নির্যাতিতা ও তাঁর মাকে দিল্লির রেড গেট থেকে জোর করে টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নতুন করে বিতর্ক ছড়াল। প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের সাজা স্থগিতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে এই অপমানজনক পরিস্থিতির মুখে পড়েন তাঁরা। এর মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী ওপি রাজভরের মন্তব্য ঘিরে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি ঘটনাটিকে হালকা করে উপহাসের সুরে বলেন, 'কিন্তু ওর বাড়ি তো উন্নাওতেই...', তারপরেই হেসে ওঠেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানাতে ইন্ডিয়া গেটের লনে বিক্ষোভে বসেছিলেন নির্যাতিতা ও তাঁর মা। সেই সময় পুলিশ তাঁদের জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ঘটনার পর ভেঙে পড়ে নির্যাতিতা বলেন, 'আমি তখনই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে থেমে যাই।'
বুধবার সকালে নির্যাতিতা জানান, কুলদীপ সিং সেঙ্গারের সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত তাঁদের পরিবারের কাছে ‘কাল’ বা মৃত্যুর সমান। তিনি বলেন, 'আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব। এই রায় আমাদের নিরাপত্তা আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।'
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কুলদীপ সিং সেঙ্গারের সাজা মঙ্গলবার স্থগিত করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে জামিন দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। তবে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি নির্যাতিতার বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যেতে পারবেন না এবং নির্যাতিতা বা তাঁর মাকে কোনওভাবেই হুমকি দিতে পারবেন না। এই শর্ত ভাঙলে জামিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে।
তবে সেঙ্গার আপাতত জেলেই থাকছেন, কারণ নির্যাতিতার বাবার হেফাজতে মৃত্যুর মামলায় তিনি এখনও ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন এবং সেই মামলায় তাঁর জামিন মেলেনি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নির্যাতিতা জানান, ঘটনার সময় তিনি নাবালিকা ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা ইতিমধ্যেই তুলে নেওয়া হয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্তে তাঁদের ভয় আরও বেড়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'এই ধরনের মামলায় দোষী যদি জামিন পায়, তাহলে দেশের মেয়েরা কীভাবে নিরাপদ থাকবে?' আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, 'যাদের টাকা আছে, তারাই জেতে, যাদের নেই, তারা হেরে যায়।'