মহাকুম্ভ 'মৃত্যুকুম্ভে' পরিণত হয়েছে, বলে বিধানসভায় যোগী সরকার ও বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে নানা কটাক্ষে বিঁধেছেন মমতা। এবার উত্তরপ্রদেশে বিধানসভায় বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বললেন, 'সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে ও কুম্ভের বিরুদ্ধে কোনও রকম খারাপ মন্তব্য করা মানে জেনে রাখবেন, ৫৬ কোটি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস নিয়ে খেলা করা।'
'মহাকুম্ভ মৃত্যুকুম্ভে পরিণত হয়েছে'
বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকুম্ভে অব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে বিধানসভায় মমতা বলেন, 'মহাকুম্ভ নিয়ে আমি নাই বা বললাম। ওটা এখন মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুকূপের মতো। আমরা মহাকুম্ভকে সম্মান করি। আমি শ্রদ্ধা জানাই। গঙ্গা মাকে সম্মান জানাই। কিন্তু পরিকল্পনা ছাড়া... এত মানুষের মৃত্যু। বললেন ৩০ জনের মৃত্যু। কথাটা কি সঠিক? কত মৃতদেহ ভাসিয়ে দিয়েছেন! কত? হাজার হাজার। আট বার আগুন লেগেছে। বড়লোকদের জন্য লক্ষ টাকার ক্যাম্প, আর গরিবদের জন্য... লাইনে দাঁড়ান। ১৫-২০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে... একটা মাদুরে বসলেও ২ হাজার টাকা। একটা লাল চা ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, স্নানের জন্য আলাদা টাকা। মহাকুম্ভের পবিত্র জায়গা আপনারা দূষিত করেছেন। সব জায়গায় হাইপ তুলে দিয়েছে। মৃতদেহের উপর দিয়ে যাঁরা হাইপ তুলছেন আর টাকা কামানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের আমি মেনে নিতে পারি না। এত বড় একটা আয়োজন, পদপিষ্ট হতেই পারে, কিন্তু প্ল্যানিং করতে হবে। কী প্ল্যানিং করেছিলেন? ফ্রিতে ট্রেন দিচ্ছেন। আগে দেখুন আদৌ সেই পরিকাঠামো আছে কিনা।'
'৫৬ কোটি মানুষের আস্থা নিয়ে খেলা করছেন'
মমতার এই মন্তব্যের পরেই শুভেন্দু অধিকারী সহ গোটা বিজেপি নেতৃত্ব একযোগে আক্রমণ শুরু করে দেন। রাজ্য বিজেপি তো বটেই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট শুরু করেছেন। এহেন পরিস্থিতিতে আজ অর্থাত্ বুধবার যোগী আদিত্যনাথও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেই পাল্টা জবাব দিলেন। বললেন, '৫৬ কোটি ভক্ত মহাকুম্ভে স্নান করেছেন। সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে এবং কুম্ভের বিরুদ্ধে যারাই খারাপ কথা বলছেন, তারা মনে রাখবেন, ৫৬ কোটি মানুষের আস্থা নিয়ে খেলা করছেন। এই আয়োজন কোনও নির্দিষ্ট দল বা সরকারের ছিল না। এই আয়োজন সমাজের। অখিলেশ যাদব জিগ্গেস করছেন, পদপিষ্টে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, লালু যাদব বলছে ফালতু কুম্ভ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন মৃত্যুকুম্ভ,খাড়গেজি বলছেন, কুম্ভে না কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, জয়া বচ্চন বলছেন, জল যাতে দূষিত হয়ে যায়, তাই সব মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সব কথাটা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য। বিরোধীরা সবাই মিলে সনাতন ধর্মের বিরোধী কথা বলছে। সনাতন ধর্মের আয়োজন করা কি অপরাধ? যদি তা হয়, তাহলে আমাদের সরকার ভবিষ্যতেও এই অপরাধ করবে।'
'সঙ্গমের কাছে ব্যারিকেড ভেঙে পড়েছিল'
গত ২৯ জানুয়ারির পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্য, ওই ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। যারা এবারের মহাকুম্ভের পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে সরব হচ্ছেন, তাদের পুরনো কুম্ভের দিকেও তাকানো দরকার। যোগীর কথায়, 'পুরনো কুম্ভে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল। পরেও কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর ভিআইপি কালচারের কথা যারা বলছেন, যারা নিজেরাই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিলেন। মৌনী অমাবস্যায় ৫ কোটির বেশি মানুষ ওখানে জড়ো হয়েছিলেন। শহর পুরো ভর্তি ছিল। সঙ্গমের কাছে ব্যারিকেড ভেঙে পড়েছিল। সব দেহের পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। তাঁদের সসম্মানে সত্কারও করা হয়েছে।'