
উত্তরপ্রদেশের কানপুরের একটি অপরাধ চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। অভিযোগ, এক মা তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে মিলে নিজের ছেলেকে খুন করেছেন। কারণ ছেলের নামে ছিল এক কোটি টাকার জীবনবীমা পলিসি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অঙ্গদপুর গ্রামের বাসিন্দা মমতা সিং তার প্রেমিক মায়াঙ্ক কাটিয়ার এবং মায়াঙ্কের ভাই ঋষি কাটিয়ারের সহায়তায় ২৫ বছর বয়সি ছেলে প্রদীপ সিংকে খুন করেন।
বীমা আর অবৈধ সম্পর্কের লোভ
স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই মমতা এবং মায়াঙ্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি প্রদীপ। তিনি বারবার মাকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু মমতা প্রেমিকের সঙ্গ ছাড়তে রাজি হননি।
তদন্তে উঠে এসেছে, মমতা তার ছেলের নামে চারটি জীবনবীমা পলিসি নিয়েছিলেন, যার মোট মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। পুলিশের ধারণা, ওই টাকার লোভেই তিনি ছেলেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পিত খুন, দুর্ঘটনা সাজানোর চেষ্টা
ঘটনার দিন রাতে প্রদীপকে বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয় রাতের খাবারের অজুহাতে। ফেরার পথে, মায়াঙ্ক এবং ঋষি তাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানোর জন্য মৃতদেহটি একটি হাইওয়ের ধারে ফেলে দেওয়া হয়।
তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাওয়ায় স্পষ্ট হয় এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং নৃশংস হত্যা।
মোবাইল ডেটায় ফাঁস মায়ের ভূমিকা
মোবাইল লোকেশন ডেটা বিশ্লেষণে জানা যায়, অপরাধের সময় মমতা এবং তার প্রেমিক একই স্থানে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, মায়াঙ্ক স্বীকার করে যে মমতাই হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এবং বীমার টাকা পাওয়ার পর তা ভাগ করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
গ্রেফতার ও তদন্ত
পুলিশ ইতিমধ্যে মায়াঙ্ককে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে, ঋষি কাটিয়ার একটি এনকাউন্টারের সময় আহত অবস্থায় ধরা পড়ে। খুনে ব্যবহৃত হাতুড়ি, দেশী আগ্নেয়াস্ত্র এবং একটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মমতা সিং এখনও পলাতক, এবং তাঁকে ধরতে পুলিশ একাধিক দল গঠন করেছে।
গ্রামের হতবাক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রদীপ ছিলেন ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে, যিনি মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে মমতা টাকার লোভে এমন নিষ্ঠুর পদক্ষেপ নিতে পারেন। পুলিশ জানিয়েছে, মমতা ধরা পড়লেই পুরো ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের উদ্দেশ্য এবং বীমার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।