জরুরি অবস্থার সময় 'সমাজতান্ত্রিক', 'ধর্মনিরপেক্ষ' এবং 'অখণ্ডতা'র মতো শব্দ যুক্ত করা হয়েছিল। সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়ে এমনই দাবি তুলছে আরএসএস। সেই বিতর্কে নয়া মাত্রা দিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা পরিবর্তনযোগ্য নয়। এই বীজের উপর ভিত্তি করেই সংবিধান তৈরি করা হয়েছে।
জগদীপ ধনখড় বলেন, বিশ্বের আর কোনও দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বদল করা হয়নি। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংবিধান (সংশোধনী) আইন অনুযায়ী, প্রস্তাবনায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। আর তখনই 'সমাজবাদী', 'ধর্মনিরপেক্ষ' এবং 'অখণ্ডতা' শব্দগুলি যোগ করা হয়েছিল।
এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন উপ-রাষ্ট্রপতি। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) প্রস্তাবনার এই ৩ শব্দ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, জরুরি অবস্থার সময় এই শব্দগুলি যোগ করা হয়েছিল। সংবিধান প্রণেতা ড. বি.আর. আম্বেডকরের মূল সংবিধানে এগুলি ছিল না, দাবি আরএসএস-এর।
তিনি বলেন, 'জরুরি অবস্থা ভারতের গণতন্ত্রের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়। মানুষের মৌলিক অধিকার বলে কিছু ছিল না, হাজার-হাজার মানুষকে জেলবন্দি করা হয়েছিল। ঠিক সেই সময়ই সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই শব্দগুলি যোগ করা হয়েছিল... এটার মাধ্যমে সংবিধান প্রণেতাদের চিন্তাধারার সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে বৃহস্পতিবার বলেন, 'এই দু'টি শব্দ – ‘সমাজবাদী’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ – আদৌ সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকা উচিত কিনা, তা নিয়ে জাতীয় স্তরে আলোচনা হওয়া উচিত।' তাঁর মতে, শব্দগুলি 'রাজনীতিক স্বার্থসিদ্ধি'র উদ্দেশ্যে যোগ করা হয়েছিল।
এই মন্তব্য ঘিরে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল হোসাবলের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, সংবিধানের উপর আরএসএস বারবার আঘাত করছে। আরএসএসের এই দাবিকে ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ বলে উল্লেখ করেন কংগ্রেস নেতারা।
অন্যদিকে, আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ পত্রিকাতেও সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, এই দাবির সঙ্গে সংবিধান ভঙ্গের কোনও যোগই নেই। 'বরং, জরুরি অবস্থার সময় কংগ্রেসের যে ‘বিকৃত নীতি’ নিয়েছিল', তার সংশোধন করাই উদ্দেশ্য, লেখা সেই প্রতিবেদনে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ এবং বিজেপির বর্ষীয়ান নেতারা হোসাবলের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, যাঁরা সংবিধানের মূল ভাবনাকে সম্মান করেন, তাঁরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন না। কারণ, সবাই জানেন এই শব্দগুলি আম্বেদকরের মূল খসড়ায় ছিল না।