
ভ্লাদিমির পুতিনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দুই দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন, শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে বর্ণাঢ্য ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন, মেনুও সেট। শিল্প, সংস্কৃতি সহ নানা জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকবে এই ডিনার পার্টিতে।
সামরিক ব্যান্ড
ইন্ডিয়া টুডে-র এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট অনুসারে, নৈশভোজে একটি যৌথ সামরিক ব্যান্ড ভারত ও রাশিরা বিখ্যাত গান পরিবেশন করবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সঙ্গীতজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত 'ত্রিসেবা ব্যান্ড' 'সারে জাহা সে আচ্ছা' এবং 'কদম কদম বড়ায়ে যা' সহ দেশাত্মবোধক সুরের মিশ্রণে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রুশ প্রেসিডেন্টের সামনে। রাষ্ট্রীয় এই নৈশভোজের মেনুতে ভারতীয় এবং রাশিয়ান খাবার পরিবেশন করা হবে। যার মধ্যে থাকবে কাশ্মীরি ওয়াজওয়া এবং রাশিয়ান বোর্শটের মতো পদ। জমকালো এই ডিনার পার্টিতে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং শিল্পপতি সহ ১৫০ জনেরও বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নৈশভোজের মেনু
এই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে রাশিয়ান নেতার সামনে ভারতের বিশাল সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আতিথেয়তা প্রদর্শন করা হবে। নৈশভোজের মেনুতে ভারতীয় এবং রাশিয়ান, উভয় ধরনের খাবার থাকবে। যার মধ্যে রয়েছে কাশ্মীরি ওয়াজওয়া এবং রাশিয়ান বোর্শটের মতো খাবার।
উল্লেখ্য, পুতিনের পছন্দ, কঠোর খাদ্যাভ্যাস এবং নিরাপত্তা বিধি বিবেচনা করে একটি বিশেষ এবং অত্যন্ত সুরক্ষিত মেনু সাজানো হয়। রান্নার ক্ষেত্রেও মানা হয় বিশেষ প্রোটোকল। পুতিনের খাবার পৃথক ভাবে প্রস্তুত করা হয় এবং প্রতিটি খাবার একাধিকবার চেখে পরীক্ষা করা হয়।
২০১৪ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আয়োজিত নৈশভোজে স্পষ্টতই কাশ্মীরি প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিল। সেবার নৈশভোজ শুরু হয়েছিল কাশ্মীরি জাফরন ভিত্তিক পানীয় কাহওয়া দিয়ে। তাঁকে হাক কা শাকও দেওয়া হয়েছিল। যা পালং শাকের মতো সবুজ পাতার নিজস্ব রসে রান্না করা হয়। পুতিনকে দেওয়া হয়েছিল গলৌটি কাবাব। যা নরম এবং হালকা মশলা দিয়ে রাঁধা হয়েছিল। এছাড়াও পাতে পরিবেশন করা হয় মুর্গ ধানিওয়াল কোরমা, যার অর্থ ধনেপাতার গ্রেভিতে মুরগি কষা। খাবারে বাদামের তেল দিয়ে রাঁধা মাশরুম, পনির এবং নাইজেলা বীজ দিয়ে তৈরি সবজিও ছিস। ডেজার্টে ছিল গোলাপ ক্ষীর, চিজকেক ও তাজা ফল। ২০১৮ সালের ভারত সফরের সময়ে হায়দারবাদ হাউসেও একটি জাঁকজমকপূর্ণ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। মেনুতে ছিল হালকা পার্সলে এবং পনিরের সসের সঙ্গে পরিবেশিত স্যামন ফিলে। পিঁয়াজ, জাফরন এবং মশলা দিয়ে বাজা ভেড়ার মাংস। যা ঐতিহ্যবাহী মোঘল স্টাইলে রান্না করা হয়েছিল। সঙ্গে ছিল ক্রিমি সসে মুরগি কষা।
পুতিন কী খেতে পছন্দ করেন?
ভারতে পুতিনের ভোজ জমকালো হলেও তার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস বেশ সহজ সরল। পুতিন প্রায়শই তার সকাল শুরু করেন পরিজ এবং কটেজ পনির দিয়ে। তা তিনি খান মধুর সঙ্গে। তিনি ডিম ভাজা এবং তাজা ফলের রস পান করেন। প্রোটিনের জন্য তিনি মাছ খেতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে পছন্দ স্মোকড স্টারজন, যা তিনি লেবু এবং মাখনের সঙ্গে খান। পুতিন ছোটবেলা থেকেই ভেড়ার মাংস পছন্দ করেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট খুব কম মিষ্টি খান। সাধারণত টমাটো, শশার স্যালাড পছন্দ করেন। তিনি কেফির নামে একটি দুগ্ধজাত পানীয় পান করেন। মাঝে মাঝে পেস্তা আইসক্রিমও খান।
স্পেশাল ডিনার পার্টি
রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতার জন্য আয়োজিত এই ডিনার পার্টি ভারতের সঙ্গে সে দেশের কূটনৈতিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অন্যতম একটি বিশেষ নিদর্শন হতে চলেছে। গোটা বিশ্বে একাধিক যুদ্ধ এবং অনিশ্চয়তার আবহে পুতিনকে বর্ণাঢ্য অভ্যর্থনা জানানো ভারতের কাছে বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন কূটনীতিবিদরা।