Donald Trump On India-Pakistan: ফের চর্চায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারে ভারতকে নিশানা করে এমন এক মন্তব্য করে বসলেন, যা শুনে অনেকেই বলছেন, এটা একটা চাপ বাড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ বললেন, “হতে পারে আগামী দিনে ভারত পাকিস্তান থেকে তেল কিনবে।” এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহল ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা হঠাৎ চমকে গিয়েছেন।
এমন এক সময়ে তিনি এই কথা বললেন, যখন আমেরিকা সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে তেল নিয়ে ডিল করে ফেলেছে। চলুন, বুঝে নেওয়া যাক আসলে কী হচ্ছে, কেন ট্রাম্প ভারতকে নিয়ে এতটা চাপে রাখার চেষ্টা করছেন, আর এর পেছনে লুকিয়ে থাকা কূটনৈতিক খেলাটা ঠিক কী?
পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি করল আমেরিকা
রয়টার্স সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রিফাইনিং কোম্পানি অক্টোবর মাসে আমেরিকা থেকে ১০ লক্ষ ব্যারেল কাঁচা তেল আমদানি করবে। এই প্রথমবার তারা সরাসরি আমেরিকা থেকে তেল আনছে। আমেরিকার কোম্পানি ‘ভিটল’-এর সঙ্গে এই চুক্তি করেছে তারা।
এই খবরের একদিন পরই ট্রাম্প ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “হতে পারে ভারত ভবিষ্যতে পাকিস্তান থেকে তেল কিনবে।” অথচ সবাই জানে পাকিস্তানের তেল উৎপাদনের অবস্থান বিশ্বে ৫৩ নম্বরে, আর তাদের দৈনিক উৎপাদন মাত্র ৬২,০০০ ব্যারেল। তাই ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু একটা ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল’ বলেই ধরে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।
কেন ভারতকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প?
ট্রাম্পের এই কথার পেছনে যে গেমপ্ল্যান রয়েছে, তা স্পষ্ট। তিনি ভারতকে চাপ দিতে চাইছেন ৩টি প্রধান কারণে:
১. ট্রেড ডিলের চাপ:
ভারত এখনও পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে কৃষি ও ডেয়ারি প্রোডাক্টস নিয়ে ট্যারিফ কমানোর কোনও চুক্তিতে রাজি হয়নি। ভারত তার কৃষক, MSME আর ছোট ব্যবসার স্বার্থে কোনও ছাড় দিতে নারাজ। আর ট্রাম্প চান ভারত মার্কিন কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য বাজার খুলে দিক। এই কারণেই তিনি চাপে ফেলতে চাচ্ছেন ভারতকে।
২. রাশিয়া থেকে তেল ও ডিফেন্স কেনা
২০২৫-এর প্রথম ৬ মাসে ভারত তার মোট কাঁচা তেলের ৩৫% রাশিয়া থেকে কিনেছে। শুধু তাই নয়, ডিফেন্স সরঞ্জামও রাশিয়া থেকেই বেশি কিনছে ভারত। ট্রাম্প চান ভারত যেন রাশিয়ার বদলে আমেরিকার দিকেই ঝুঁকে পড়ে। তা তেল হোক বা অস্ত্র।
৩. ২৫% ট্যারিফের হুমকি
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ৭ অগাস্ট থেকে ভারতের উপর ২৫% অতিরিক্ত ট্যারিফ বসানো হতে পারে। এটি একপ্রকার 'চাপ দিয়ে কথা আদায়' করার কৌশল। অর্থাৎ, ভারতকে এমনভাবে কোণঠাসা করা যাতে তারা শেষমেশ মার্কিন শর্তে রাজি হয়ে যায়।
ভারত কী বলছে? চাপ মানছে?
ভারতের একাধিক সরকারি সূত্র বলছে, “চাপের রাজনীতিতে আমরা হাঁটবো না।” ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কৃষি, ডেয়ারি ও ছোট শিল্পের স্বার্থের পরিপন্থী কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি করা হবে না, যা নিজেদের মানুষের ক্ষতি ডেকে আনবে।
ট্রাম্পের মন্তব্য কতটা বাস্তবসম্মত?
পাকিস্তানের অর্থনীতি যে এখনও ভঙ্গুর, তা সারা বিশ্ব জানে। তাদের নিজস্ব তেল উৎপাদনের ক্ষমতা এতটাই কম যে, তারা নিজেরাই আমদানির উপর নির্ভর করে। সেখানে ট্রাম্পের বলা “পাকিস্তান ভারতকে তেল বিক্রি করতে পারে”, এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে হাসির উর্দ্রেক করেছে। ভারতের হাতে সৌদি আরব, কুয়েত, ইউএই, কাতার, ইরান, ব্রাজিল এমনকি রাশিয়ার মতো বহু বিকল্প তেল সরবরাহকারী দেশ রয়েছে। সেখানে পাকিস্তানের নাম উঠছে, মানে ব্যাপারটা কতটা ‘বানোয়াট’ বোঝাই যাচ্ছে।
ট্রাম্পের এমন একপেশে মন্তব্য, আর ভারতকে নিয়ে লাগাতার চাপ তৈরি করার চেষ্টা, শুধু একটা কূটনৈতিক দিকই নয়, এটা মার্কিন ইলেকশন পলিটিক্সের অংশ বলেই অনেকে মনে করছেন। ভারত এখনও পর্যন্ত তার স্বার্থে অটল আছে। আর এই পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান যতটা স্পষ্ট, ততটাই দৃঢ়।